নাগেশ্বরীর ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ পেশি শক্তি দেখাতে গিয়ে ছাত্র-জনতার হামলার শিকার
মোঃ রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলাধীন ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুল পেশি শক্তি দেখাতে গিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার হামলার শিকার হয়েছেন। এ সময় ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের সামনে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক বছর পূর্বে ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষের অবসর জনিত কারণে নতুন করে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ঐ সময় ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক মোঃ মিজানুর রহমান বুলবুল স্থানীয় ভিতরবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ার বদৌলতে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে তরবিরের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক খান মোহাম্মদ নুরুল আমিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দায়িত্বে থাকায় তাকে ম্যানেজ করে অধ্যক্ষ পদে তিনি নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগ বৈধতা না পাওয়ায় তিনি অদ্যবধি ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ে অধ্যক্ষ পদে বেতন ভাতা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি হতে বঞ্চিত আছেন। গোপনে তিনি অধ্যক্ষ পদে থাকলেও পূর্বের এমপিও ভুক্ত প্রভাষক হিসেবে বেতন ভাতার তার নামীয় অংশ উত্তোলন করলে কলেজে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর দীর্ঘদিনের জমে থাকা অনিয়মের বিষয়গুলি সবার সামনে আবারো নতুন করে চলে আসে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুসন্ধান করে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ হওয়ায় তাকে সম্প্রতি বরখাস্ত করে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আবেদনের প্রেক্ষিতে ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি গত ৪ সেপ্টেম্বর ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ রকম অবস্থায় আইনী প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধান না করে ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয় বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুল ১১ সেপ্টেম্বর’২০২৪ইং বুধবার সকালে তার আত্মীয় স্বজন,ভাইদের সহ স্থানীয় কিছু লোকজনকে নিয়ে প্রায় ১০টি অটো ও ১৫টি মোটর সাইকেলে লোকজন নিয়ে লাঠি সোঠা সহ কলেজে প্রবেশ করে। এ রকম অবস্থায় ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাৎক্ষণিক ভীতির সঞ্চার হয়। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুলের লোকজনের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় মিজানুর রহমান বুলবুলের ভাইদের সহ বিভিন্ন ব্যক্তি আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং মিজানুর রহমান বুলবুলের ব্যক্তিগত ব্যবহারকৃত মোটর সাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারুক হোসেন আহমেদ জানান, বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুল সকালে তার কিছু লোকজন নিয়ে অতর্কিত কলেজে আসে। তাদের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার বাক বিতন্ডা হয়েছে। কলেজের সামনে কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। আমি বিষয়টি পূর্ব থেকে আচ করতে পেরেছিলাম। পুলিশে খবর দেয়ায় তারা এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এব্যাপারে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বুলবুল জানায়, আমার ভাইয়েরা অসুস্থ্য। তাদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত আছি। এ সময় আমি কিছু বলতে পারবো না। এব্যাপারে ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শফিউল আলম শফি জানায়, ভিতরবন্দ স্নাতক মহাবিদ্যালয়ে সংঘর্ষ বাধলে আমি সেখানে যাই। উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। এ সময় বেশ কয়েকজন আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।