শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুতে  শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা 

সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুতে  শোকে স্তব্ধ পুরো এলাকা 

এইচএম মোকাদ্দেস, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামে মাঠে কাজ করা অবস্থায় বজ্র্পাতের ঘটনায় আপন দুই ভাই ও চার পিতা-পুত্রসহ একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মাটিকোড়া গ্রামটি। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছে স্বজনরা।
চোখের সামনে এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে ঘটনাস্থল মাটিকোড়া গ্রামে গেলে এমনই দৃশ্য দেখা যায় । মাটিকোড়া গ্রামেরই নিহত হয়েছে শিশু ও কিশোরীসহ ৪ জন। আহত হয়ে হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে আরো ৪ শিশু।  মাটিকোড়া গ্রামের নিহতরা হলেন, নুরুল ইসলামের পুত্র শাহ আলম (৪০), বাহাদুর আলীর পুত্র আব্দুল কুদ্দুস (৬০), আলিম মিয়ার মেয়ে রত্না খাতুন রিতু (১২) ও মোস্তফার মেয়ে মারিয়া (৭)।
এছাড়াও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধাীন রয়েছে নুরনবীর মেয়ে নূর জাহান (৯) ও তার বোন নূর নাহার নদী (১২), সাইফুল প্রামানিকের মেয়ে রুপা (১২) ও রফিকুল ইসলামের মেয়ে আমিনা (১৩)। এর মধ্যে নূর নাহার নদী গুরুতর অবস্থায় খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে।  নিহত রিতুর বাবা আব্দুল আলিম বলেন, আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির পাশেই একটি ডোবাতে গোসল করতে যায়।
কিন্তু ডোবায় কচুরিপানা থাকায় পাশেই দেখতে পায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিয়ে জমিতে পানি দেয়া হচ্ছে। তখন সেখানে সে গোসল করতে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তে বৃষ্টি শুরু হলে সে ওই শ্যালো ঘরের টিনের ছাপড়ার নিচে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই বজ্রপাত হয়। আমরা খবর পাওয়ার পরে সেখানে গিয়ে দেখি রিতু কাদা পানিতে পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শাহ আলম এর বাবা নুরুল ইসলাম প্রামানিক  বলেন, আমার ছেলে শিবপুর গ্রামের মানুষের কাছে বোরো ধানের চারা বিক্রি করে। তারা সেই চারা তুলতে আসলে শাহ আলমও তাদের সঙ্গে যায়। এরপরেই বৃষ্টি শুরু হয়। পরে আমরা জানতে পারি শাহ আলম বজ্রপাতে মারা গেছে। শাহ আলমের সঙ্গে একই গ্রামের আরও তিনজন মারা গেছে। মারা গেছেন চারা তুলতে আসা শিবপুর গ্রামেরও ৫ জন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শুক্কুর প্রামানিকের ছেলে মো. মানিক হোসেন  বলেন, বজ্রপাত দেখে সেখানে থাকা এক শিশু দৌড়ে এসে এ কথা বলে। বজ্রপাতের কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমিই প্রথমে দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি একেক জন একেক জায়গায় পড়ে আছে। এরপরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। পরে তারা এসে সবাইকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়।  পঞ্চক্রোশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, একই পরিবারের ৫ জনসহ  ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা এলাকাবাসী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। এলাকার সবার মাঝে একটা শোকের ছায়া বয়ে যাচ্ছে।  নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাটাও যেন কারো জানা নেই।  উল্পাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন  বলেন, এঘটনায় সর্বমোট ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুইজন সম্পর্কে আপন ভাই ও চারজনের পিতা-পুত্র সম্পর্ক রয়েছে। খবর পেয়ে আমরা  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
৪২ বার ভিউ হয়েছে
0Shares