শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ছাত্রলীগ নেতার মহাজনী সুদ ব্যবসা-লাভের টাকা দিতে না পারায় দোকানীকে জখম

ছাত্রলীগ নেতার মহাজনী সুদ ব্যবসা-লাভের টাকা দিতে না পারায় দোকানীকে জখম

ইসাহাক আলী, নাটোর, ২৭ আগস্ট- দাপট দেখিয়ে অবৈধ পুকুর খনন করে আলোচনা সমালোচনায় আসা ছাত্রলীগ নেতা রোকনুজ্জামান রাসেল ওরফে রোকন এবার এক দোকানীকে জখম করেছেন সুদের টাকার লভ্যাংশ দিতে না পারায়। সেই অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেফতারও করেছে সদর থানা পুলিশ। জানা গেছে এলাকায় সুদের ব্যবসা করে প্রভাবশালী বনে গেছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।  তার কাছ থেকে সুদের উপর টাকা নিলে সপ্তাহে গুনতে হয় শতকরা ১০ ভাগ লাভ। আর সময় মতো সেই লাভ না পেলেই সহযোগীদের নিয়ে সুদে টাকা গ্রহীতার উপর নির্যাতন চালান রোকন। এই নির্যাতন আর সম্মানের ভয়ে অন্যরাও সময় মতো চুকে দেন বছরে মূল টাকার চেয়েও অতিরিক্ত কয়েকগুন টাকা। সাথে মূল টাকাটাও শোধ করতে পুরোটাই।

নাটোর জেলা ছাত্রলীগের নেতা হলেও এলাকায় সুদ কারবারি হিসাবে তার পরিচয় দীর্ঘদিনের।  আগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর গত ২২শে ফেব্রুয়ারী জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির তালিকায় ৫ নং সহ-সভাপতি হন রোকনুজ্জামান রাসেল। ছাত্রলীগের পরিচয় ধারণের পর সুদ কারবারে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রোকনুজ্জামান। নেতা হবার পর এলাকায় দাপটও বেড়েছে তার। ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চাননা কেউ। এছাড়া তার নিকটজন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হওয়ায় অনেক স্থানে সেই প্রভাবও কাজে লাগান রোকন এমন অভিযোগও চাউর হয়েছে এলাকায়।

নেতৃত্বের সেই দাপটে এবার সুদে টাকা গ্রহণকারী এক দোকানীকে মাথায় নির্যাতন করে রক্তাক্ত করেছেন রোকন। মাথায় চাবি ঢুকিয়ে নির্যাতন করায় রক্তপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে ওই দোকানীর নাম আব্দুস সাত্তার সরকার। রোকনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা সুদের উপর নেন ব্যবসায়ী সাত্তার । ৫ হাজার টাকার সাপ্তাহিক সুদ ৫০০ টাকা। সপ্তাহে সুদের কিস্তির ৫০০ টাকা না দেয়ায় মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করা হয় সাত্তারকে। আব্দুর সাত্তার বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত ২৫ আগষ্ট রাতে সদর উপজেলা করোটা এলাকায় মারপিটের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আব্দুস সাত্তারের ছেলে মোঃ সাব্বির বাদি হয়ে ছাত্রলীগ নেতা রোকন সহ দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৪ জনকে অভিযুক্ত করে সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শুক্রবার রাতে নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনকে গ্রেফতার করা হয়।

নাটোর সদর থানায় দায়ের করা এজাহার সুত্রে জানা যায়, নাটোর সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা চাইপাড়া গ্রামের মুদি দোকানী সাত্তার সরকার (৪০) তার ব্যবসার প্রয়োজন হলে তিন মাস আগে পাশের করোটা গ্রামের রোকনুজ্জামান রোকনের কাছে সুদের ওপর ৫ হাজার টাকা নেয়। সাত্তার সরকার শর্ত অনুযায়ী ওই টাকার সাপ্তাহিক সুদ হিসেবে ৫০০ টাকা করে প্রদান করতে থাকেন। সাত্তার সরকার যতদিন ওই ৫০০০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না ততদিন তাকে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে সুদ দিতে হবে। গত ২৫ আগষ্ট রাত ৮ টার দিকে সাত্তার সরকারের কাছে ওই সুদের টাকা নিতে যায় অপর সুদ ব্যবসায়ী করোটা গ্রামের সেলিম মিস্ত্রির ছেলে মোঃ শিমুল (২৫)। হাতে টাকা না থাকায় সাত্তার ওই দিন অপারগতা জানালে শিমুল তাকে গালমন্দ করতে থাকে। এ সময় সাত্তার তাকে গালমন্দ না করার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। কিন্তু শিমুল কোন কথাই শুনতে চায়না। সে ফোন করে রোকনকে এলাকায় আসতে বলে। একটি মাইক্রোবাস ও দু’টি মোটর সাইকেলে রোকন তার সঙ্গি সহ সাত্তার সরকারের দোকানে যায়। এ সময় শিমুল সহ সকলেই সাত্তার সরকারের ওপর চড়াও হয়ে মারপিট করতে থাকে। এক পযার্য়ে রোকনুজ্জামান মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে সাত্তার সরকারের মাথায় আঘাত করলে চাবির কিছু অংশ মাথায় ঢুকে যায়।  এছাড়াও তার দোকানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।

হামলাকারীরা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়রা আহত সাত্তার সরকারকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আব্দুস সাত্তার সরকার বলেন, রোকনুজ্জামান দলবল নিয়ে চলেন। আমি টাকা দিতে না পারায় তার প্রতিনিধি শিমুল চলে যান। তখন আমার মনে হয় যে রোকনুজ্জামান এসে ঝামেলা করবেন। তখন টাকা ধার করে এনে আমি রোকনুজ্জামানের বাবার হাতে দিয়ে আসি এবং অনুরোধ করি যেন সে আমার দোকানে হামলা না চালায়। কিন্ত সে এসে আমাকে আঘাত করে।

নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাছিম আহমেদ ছাত্রলীগ নেতা রোকনুজ্জামানকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুদ ব্যবসা সংক্রান্ত ও মারপিট মামলায় রোকনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রোকনুজ্জামানের এলাকা করোটার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, রোকনুজ্জামান ছাত্রলীগ নেতা হবার পর থেকেই তার ভয়ে তটস্থ থাকে এলাকার মানুষ। বিভিন্ন বিচার শালিশের নামে মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায় করে সে। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস করে না কেউ।  সম্প্রতি এ বছর সে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ ভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার নিকটজন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হওয়ায় অনেক স্থানে সেই প্রভাবও কাজে লাগান রোকন এমন অভিযোগও চাউর হয়েছে এলাকায়।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শাহিন বলেন, তারা রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের জেলা সভাপতি ফরহাদ-বিন আজিজের সাথে কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে যদি অভিযোগ প্রমানিত হয় তবে রোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৩৪৪ বার ভিউ হয়েছে
0Shares