বৃহস্পতিবার, ৩০শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিরাজগঞ্জে ৩ পরিদর্শকসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জে ৩ পরিদর্শকসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

Views

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : এক ট্রাক চালককে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সিরাজগঞ্জের দুই থানার সাবেক ৩পুলিশ পরিদর্শকসহ ১৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. গোলাম হাফিজ কিরন বলেন, আদালত অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ট্রাক চালক রোকন মোল্লা (৩৬) নিজে বাদী হয়ে ২৮ জানুয়ারী সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৬জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৯জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। রোকন মোল্লা পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছরাপাড়া এলাকার রহমত মোল্লার ছেলে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামীরা হলেন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক, সলঙ্গা থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাজউদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার সাবেক এস.আই আব্দুস সালাম, সলঙ্গা থানার সাবেক এস.আই মনসুর রহমান ও এএসআই আব্দুল কুদ্দুস।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ মে রাত ১টার দিকে ট্রাক চালক রোকন মোল্লা বগুড়া থেকে পাবনা যাওয়ার পথে পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়কের উল্লাপাড়ার কাওয়াক মোড়ে রাত্রিকালীন ডিউটিরত পুলিশের একটি পিকআপের সাথে ওই ট্রাকের ধাক্কা লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার তৎকালীন ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর ইসলাম ট্রাক চালক রোকন মোল্লার দিকে রিভলভার তাক করেন। ওই সময় ভয়ে চালক ট্রাকটি ঘুরিয়ে সিরাজগঞ্জ রোড হাটিকুমরুলের দিকে যেতে থাকে। পুলিশের পিকআপও তাঁর পিছু নেয়।
সংবাদ পেয়ে সলঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি এনামুল হকও ট্রাকটি ধরতে পিছু নেয়। একপর্যায়ে নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের হরিণচড়া এলাকায় ট্রাকসহ চালক রোকন মোল্লাকে আটক করা হয়। পরে বেধড়ক মারধর করে চালক রোকন মোল্লার ডান পায়ে গুলি করা হয়। পাশাপাশি রোকন মোল্লার বিরুদ্ধে একই দিনে সলঙ্গা থানায় অস্ত্র আইনে এবং পুলিশের কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে দুইটি এবং উল্লাপাড়ায় থানায় ডাকাতির অভিযোগে ১টি মোট ৩টি পৃথক মামলা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ হেফাজতে তাকে প্রথমে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকার অর্থপেডিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় চালক রোকন মোল্লার ডান পায়ের হাটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে।
আইনজীবী এ্যাড. গোলাম হাফিজ কিরন আরো বলেন, পুলিশের দায়ের করা ৩টি মামলায় ৭ মাস হাজতবাসের পর জামিন পেয়ে ১৯ ডিসেম্বর চালক রোকন মোল্লা কারাগার থেকে বের হয়েছেন। মেডিক্যাল সনদে তাকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো: ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। পরবর্তীতে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে মামলার আসামী উল্লাপাড়া থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে রাজবাড়ি জেলায় রেলওয়ে  পুলিশে কর্মরত) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম মোবাইলে বলেন, মামলার বিষয়টি শুনেছি। বাদী নিজেই একজন আন্ত: জেলা ডাকাত দলের দল নেতা। তার বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৬ জেলায় কমপক্ষে ২৮টি  মামলা রয়েছে। ঘটনার দিন ডাকাতির ঘটনার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করার সময় পায়ে গুলি করা হয়েছিল।
মামলার অপর আসামী সলঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি (বর্তমানে পাবনার সিআইডিতে কর্মরত) এনামুল হক মোবাইলে বলেন, রোকন মোল্লা একজন দুর্ধর্ষ ডাকাত। ঘটনার দিন সে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ডাকাতি করতে এসেছিল। পালিয়ে যাওয়ার সময় সে কর্তব্যরত একদল পুলিশকে ট্রাকের নিচে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে বাধ্য হয়ে তাকে পায়ে গুলি করা হয়েছিল।

Share This

COMMENTS