বুধবার, ৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাঘার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে উৎপাদন হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল

বাঘার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে উৎপাদন হচ্ছে সবজিসহ বিভিন্ন ফসল

Views

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মানদী। তার পাশ দিয়ে অবস্থান করছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। এক সময় পদ্মা প্রমত্তা থাকলেও এখন তা শুকিয়ে পলি পড়ায় আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে চর জেগে ওঠা এসব জমিতে এখন সারা বছর ধরে উৎপাদন করা হচ্ছে নানা প্রকার সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। যা স্থানীয় চাহিদা প‚রণের পাশাপাশি রপ্তানি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এ অঞ্চলের লোকজন জানান, এক সময় চরাঞ্চলের জমিতে শুধু ধান, গম, পাট আর আখ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে-আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান, কলা বাগান-সহ হরেক রকম সবজি চাষ। বিশেষ করে প্রতিশীত মৌসুমে নদী বিধৌত চরাঞ্চল জুড়ে লক্ষ্য করা যায় নানা রকম সবজি। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। এ অঞ্চলের কৃষকরা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে নানা প্রকার সবজি চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা প‚রণের পাশাপাশি প্রেরণ করছেন ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর ফলে এখানে সবজির দাম কমে যাচ্ছে।

লক্ষ্য করা গেছে, উপজেলার নদী তীরবর্তী চকরাজাপুর ইউনিয়নের পলাশি ফতেপুর, দাদপুর, কালিদাসখালী, কলিগ্রাম, টিকটিকি পাড়া, করারি নওসারা, সরের হাট, চাঁদপুর এসব চরে এবার চাষ হচ্ছে আলু, বেগুন, টমেটো, কপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, করলা, পুঁইশাক, লালশাক-সহ ভিন্ন ধরনের সবজি। এরমধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও আলু চাষে বিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকরা বলছেন, খুব শীঘ্রই নতুন পেঁয়াজ এবং রসুন উঠবে। ইতোমধ্যে আলু উঠেছে। পাশাপাশি চাষ হবে গম, ছোলা, ভুট্টা, মসুর, আখ, সরিষা ও বাদাম। এ ছাড়া রয়েছে শতাধিক আম, পেয়ারা, পেঁপে, বরই ও কলা বাগান।

পলাশি ফতেপুরের কৃষক আনোয়ার শিকদার জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি হিসাবে কপি এবং বেগুন চাষ করছেন। এগুলো আবাদ করার প‚র্বে জমিতে লাঙলের বদলে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে। এর ফলে চাষাবাদের খরচ কমেছে। এ ছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যায়। তিনি জানান, শ্যালো মেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম এবার বেশি হওয়ায় সেচ খরচ বেশি পড়ছে। এ ছাড়াও সবজির দাম আশানুরূপ না হওয়ায় এবার কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অপর একজন কৃষক শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি এ বছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ, তিন বিঘা জমিতে রসুন, এক বিঘা জমিতে লাউ, দুই বিঘা জমিতে বেগুন, এক বিঘা জমিতে ম‚লা এবং তিন বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছেন। এদিক থেকে সবচেয়ে পেঁয়াজ এবং রসুনে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন শুধু আমি নয়, আমার মতো চরাঞ্চলের সকল কৃষকই বর্তমানে নানা অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি সবজি চাষ করছেন। কিন্তু বর্তমানে বাজার ম‚ল্য কম হওয়ায় সকল কৃষকের মাথায় আঘাত লেগেছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, চরাঞ্চলকে দেখলে এখন আর চর মনে হবে না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণ আম বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটছে। বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নানা প্রকার সবজি উৎপাদনে রেকর্ড ভাঙছে এই ইউনিয়ন। বর্তমানে শীত শুরু হওয়ার পর থেকে সবজির কমতি নেই চরাঞ্চলে।

উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। এখানে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে যে কোন ফসল বেশি পরিমাণ চাষাবাদ হচ্ছে। এ কারণে কৃষকদের মাঝে ফসল ফলানোর আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তাঁর মতে, গত কয়েক বছর ধরে সবুজের নীরব বিপ্লব ঘটেছে চরাঞ্চলে। তিনি বলেন, উপজেলার সমতল এলাকার ৬ ইউনিয়ন এবং দুই পৌরসভা মিলে যে পরিমাণ সবজি চাষ হয় না, তার চেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়নে। তিনি মাঝে মধ্যে এ সকল ফসল পরিদর্শনে যান এবং কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে জানান।

Share This

COMMENTS