আজ থেকে শুরু হয়েছে কাহালুর ঐতিহাসিক পাঁচপীর মাজারের ওরশ মাহফিল।।
স্টাফ রিপোটারঃ
আজ ১ ফেব্রুয়ারি শনিববার থেকে শুরু হয়েছে
কাহালুর ঐতিহাসিক পাঁচপীর মাজার শরীফের বাৎসরিক ওরশ মাহফিল।
মাজার কমিটির আয়োজনে প্রতিবছর ১,২ ফেব্রুয়ারি এ ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচপীর মাজারের এ ওরশ মাহফিল ৭৭তম অধিবেশন। রাতে মাজার প্রাঙণে অনুষ্ঠিত হবে ভক্ত, আশেকানদের অংশ গ্রহনে হালকায়ে জিকির। আগামিকাল রোববার রাতে ওয়াজ মাহফিল ও তবারক বন্টন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ ওরশ মাহফিল শেষ হবে।
ওরশ মাহফিলের আয়োজনকে ঘিরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। দুরদূরন্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ওরশ মাহফিলে এসে শরীক হন। এ উপলক্ষ্যে নতুন জামাই ও আত্নীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয়। পাঁচপীর এলাকায় ঘরে ঘরে চলে অতিথি আপ্যায়নের ব্যস্ততা।
পাঁচপীর মাজার শরীফের লিখিত কোন ইতিহাস পাওয়া না গেলেও ১৯৪০ সালের দিকে এলাকার কিছু ইসলাম ধর্মানুরাগী ও প্রবীণ ব্যক্তি গন এই মাজারের সন্ধ্যান পান বলে জানান, মাজার কমিটির সহ সেক্রেটারি ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত সোলাইমান আলীর ছেলে মোঃ আবু বকর সিদ্দিক। তবে কত শতাব্দীতে এই পাঁচপীর মাজারে সূফী সাধক গন সমাহিত হয়েছেন তা আজো জানা যায়নি৷
কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে দূর্গাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সান্তাহার -বোনারপাড়া রেললাইনের দক্ষিণ পাশে পাঁচপীর রেল স্টেশনের ১ কিলোমিটার পশ্চিমে ঐ স্থানটিতে উঁচু মাটির উপর ঝোপ জঙ্গলে ছেয়ে ছিলো। সে সময় আড়োবাড়ি গ্রামের মরহুম নায়েবুল্লাহ, লোকনাথ পাড়া গ্রামের আবুল ফাতাহ খান,সিংড়া পাড়া গ্রামের রিয়াজ কবিরাজ ও ফকীরপাড়া গ্রামের ছবেদ আলী ঐ উঁচু স্থানটিতে মসজিদ নির্মাণে মাটি কাটতে গেলে প্রথমে ২১ ফুট ১টি পুরাতন কবরের সন্ধান পান। এরপর সেখানে আরো ৪টি করবের সন্ধান মিলে। পরবর্তীতে ঐ স্থানটিতে ৫-৬ ফুট লম্বা আরো ২টি কবরের সন্ধান মিলে। কবরের সন্ধ্যান মেলায় ঐ স্থানে মসজিদ নির্মাণ সম্ভব না হওয়ায় মাজার প্রাঙণের একশ ফুট পূর্ব দিকে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ।
জনশ্রুতিতে রয়েছে সুদুর ইয়েমেন অথবা ইরাকের বাগদাদ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কয়েকজন সুফি সাধক এ অন্চলে এসেছিলেন। তৎকালীন হিন্দু রাজা প্রতাপসেন এ অন্চলে তার রাজত্ব গড়ে তোলেন। ইসলাম প্রচারে ঐ সমস্ত সূফী সাধকগনের সাথে রাজা প্রতাপসেনের যুদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে প্রতাপসেন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দলবল নিয়ে নৌকায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। পাঁচপীর এলাকায় হিন্দু রাজত্বের অবসান হয়। প্রতাপসেন রাজার নামে গড়ে উঠে প্রতাপপুর গ্রাম।
এছাড়া পূর্বে থেকেই ঐ স্থানের নাম পাঁচপীর ছিলো বলে জানা যায়। পরে সূফি সাধকদের মৃত্যু হলে ঐ উচু স্থানে তাদের সমাহিত করা হয় বলে এলাকা বাসীর নিকট থেকে সামান্য ধারণা পাওয়া যায়।
জনশ্রুতিতে আরো জানা যায়, ঐ এলাকার ধর্মানুরাগী ব্যক্তিগন ঐ উচু স্থানে মুরাকাবায় ধ্য্যনমগ্ন অবস্থায় স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারে যে, এই স্থানটিতে কয়েকজন সুফি সাধক (পীর) শায়িত রয়েছেন। এরপর থেকে স্থানীয় লোকজন এই স্থানটি পবিত্রতার সহিত রক্ষনাবেক্ষন শুরু করেন।
পরে স্থানটিতে সন্ধান পাওয়া কবর গুলো পৃথক ভাবে ইট দিয়ে বাধায় করা হয় এবং একটি পাকা ঘর ছাদ দিয়ে নির্মাণ করা হয়। ঐ ঘরে ২১ ফুট দীর্ঘ একটি কবর রয়েছে। কবরটি তিনটি গিলাফ দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। বাকি ৬ টি কবর উম্মুক্ত রাখা হয়েছে।
দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মাসুদ হাসান রঞ্জু জানান, আমার জন্মের আগে থেকে এখানে ওরশ মাহফিলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ঐ মাজারে পীর, অলি আওলিয়াগনের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও ওরশ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বর্তমানে পাঁচপীর জায়গার নামে রেলস্টেশন, স্টেশনের পাশে পাঁচপীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাজার প্রাঙণে রাহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও মসজিদ স্থাপিত হয়েছে। মাজার কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, পাঁচপীর মাজারের ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠানে সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।