বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাঘায় কর্মজীবী নারীরা বেশিরভাগ কৃষিকাজে

বাঘায় কর্মজীবী নারীরা বেশিরভাগ কৃষিকাজে

Views

বাঘা (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এমন একটা সময় ছিল যখন নারীরা থাকত গৃহবন্দি। ঘরের চার দেয়ালের মাঝে জীবন কাটিয়ে দিত তারা। কিন্তু এখন যুগের সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন এসছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষের পাশা-পাশি নারীরাও কাজ করছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। এদিক থেকে এক পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে এখনো কর্মজীবী নারীদের অর্ধেকের বেশি কাজ করছে কৃষি ক্ষেত্রে। যার বাস্তব চিত্র মিলবে বাঘা উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে।

সরেজমিন লক্ষ্য করা গেছে, সারা দেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এখন নারীদের পদচারণা। পুরুষের পাশা-পাশি শিক্ষিত নারীরা সহ-অবস্থানে ব্যাংক, বিমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা-সহ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এদিক থেকে গ্রামীন নারীদের চিত্র সম্পুর্ণই ভিন্ন। ডিজিটাল যুগেও গ্রামাঞ্চলে এলে লক্ষ্য করা যাবে, নারীরা কৃষি-সহ নানামুখি কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন।

বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন জানান, এ উপজেলায় নারীরা ধানের চারা রোপন, জমি থেকে আলু ,বেগুন, মুলা, পেঁয়াজ-রসুন উত্তোলন, সেলাই ম্যাশিন চালানো, এমনকি নকশী কাঁথা সেলাই থেকে শুরু করে বাড়িতে ধান সিদ্ধ ও শুকানো এবং আখ মাড়াই-সহ তাঁতের কাজ যেমন গামছা ও লুঙ্গী তৈরী ইত্যাদি করে চলেছেন।

অপর দিকে বাঘায় পারিবারিক কলহ নিয়ে কাজ করা বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্রাকের এক কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে গত এক বছরে প্রায় ২০০ অভিযোগ এসছে বাল্য বিয়ে এবং যৌতুকসহ দাম্পত্য কলহ নিয়ে। এর মধ্যে আমরা ১৫০ টি আপোশ করতে সক্ষম হয়ছি। এর প্রধান কারন বাল্য বিয়ে, দারিদ্রতা, যৌতুক ও অশিক্ষা। এই আপোশ হওয়া দম্পতিদের মধ্যে অধিকাংশ নারী রয়েছে যারা কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছি তাদের স্বামীরাও চান তাদের স্ত্রীদের কর্মসংস্থান হোক।

এক পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পটপরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে দেশের নারীরা। এই ৫০ বছরে মোট দেশজ উৎপাদন তথা (জি.ডি,পি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে নারীরা। নিখুত ভাবে দেখতে গেলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নারীর সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আই.এল.ও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ। তবে বর্তমানে এটি বেড়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র মিলে নারী-পুরুষের হার দাড়িয়েছে প্রায় সমান-সমান। তবে শ্রমবাজারে নারীর একটা বড় অংশই নিম্ন মজুরির ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। বাকি শিক্ষকতা, চিকিৎসা, ব্যাংকিং, ব্যবসা-বাণিজ্য-সহ নানা পেশায় যুক্ত। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীসহ বিভিন্ন উচ্চ পদেও দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। তবে শ্রমবাজারে নারীর একটা বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত। যেমন কর্মজীবী নারীদের অর্ধেকের বেশি কৃষিকাজে সম্পৃক্ত। আরেকটি বড় অংশ পোশাক শিল্পে কাজ করা ।

বাঘার চরাঞ্চলের কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, আমাদের অঞ্চলে তিন ভাগের দুই ভাগ নারী কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এমনও লক্ষ্য করা গেছে, অনেক নারী শিক্ষার্থী স্কুলে না গিয়ে তাদের মা’ এর সাথে জমিতে পেঁয়াজ, আলু ,রসুন ইত্যার্দি উত্তোলন-সহ ধান রোপন কাজ করতে চলে আসে। যা দেখেও আমাদের খারাপ লাগে। কিন্তু কিছুই করতে পারিনা।

এ বিষয়ে সমাজের সুশীল মহলের দাবি, গত কয়েক বছরে আপাত দৃষ্টিতে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের গড় হার বাড়লেও নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নারীর সংখ্যা খুবই সামান্য, এমনকি নেই বললেও চলে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুসারে, শ্রমবাজারে নারী-পুরুষ অসমতা কিছুটা কমলেও এখনো তা ৩৭ শতাংশের বেশি। গ্রামে নারীর শ্রমে অংশগ্রহণ বেড়েছে ২১ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে ৮ শতাংশ।

আবার পরিসংখ্যান ব্যুরোর আরেকটি জরিপ জানাচ্ছেন, কর্মক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীর অংশগ্রহণ যেখানে ৫০ দশমিক ৮৮ শতাংশ সেখানে শহরে সেই হার ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

Share This

COMMENTS