কুড়িগ্রামে পাট অধিদপ্তরের আওতায় পাট উন্নয়নে নানামূখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে
রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : “সোনালী আঁশের সোনার দেশ, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতায় পাট অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে পাট উন্নয়নে নানামূখী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
পরিবেশ-বান্ধব ফসল হিসেবে সোনালী আঁশ পাটের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী। সময়মত উন্নত জাতের পাট ও পাটবীজ চাষ করে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পাটবীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন। উন্নতমানের পাট ও পাটবীজ উৎপাদনে পাটচাষীদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার পাটচাষীদের কল্যাণার্থে ৫ বছর মেয়াদী ‘উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার প্রযুক্তিগত সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম বিস্তৃত। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দেখভাল করছে। পরিবেশ রক্ষা ও পাটপণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০’ এর অধীন তফসিলভুক্ত ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়া, পোল্ট্রি ফিড ও ফিস ফিড-এ ১৯টি পণ্য মোড়কীকরণে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ আইন অমান্যকারীর শাস্তি-অনধিক এক বছরের কারাদÐ বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদÐ বা উভয়দÐ। জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের নেতৃত্বে দেশব্যাপী নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৪,৫৫৬টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা অর্থদÐ এবং ৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ প্রদান করা হয়েছে। আইনী জটিলতা এড়ানোর লক্ষ্যে নির্ধারিত পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিত করণ এবং পরিবেশ রক্ষা ও পাটপণ্যের অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। ‘পাট আইন, ২০১৭’ মোতাবেক পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা পরিচালনার জন্য পাট অধিদপ্তর হতে লাইসেন্স গ্রহণ ও তা সময়মত নবায়ন করা বাধ্যতামূলক। প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করলে নবায়ন ফি’র সমপরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ জরিমানার বিধান রয়েছে। লাইসেন্সবিহীন পাট ও পাটপণ্যের ব্যবসা পরিচালনা আইনতঃ দÐণীয়। এ আইন অমান্য করার শাস্তি অনধিক ৩ বছর কারাদÐ বা ১ লক্ষ টাকা অর্থদÐ বা উভয়দÐ। সময়মত পাট ও পাটজাত পণ্যের লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নের কথা বলা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা পাট অধিদপ্তরের আওতায় জেলায় পাট চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানসহ পাট চাষীদের মাঝে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করণে পাটবীজ বিতরণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা পাট অধিদপ্তরের মূখ্য পরিদর্শক খায়রুল হক জানান, বহুমূখী পাটপণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারেই দেশের সমৃদ্ধি- এ লক্ষ্যে পাট অধিদপ্তর কাজ করছে। সরকার ইতিমধ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ প্রণয়ন করেছে। উক্ত আইনের অধীন ধান, চাল, গম, ভ‚ট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, ময়দা, পোল্ট্রি ফিড, ফিস ফিড ও তুষ-খুদ-কুঁড়া মোড়কীকরণে পাটের বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। আইন ভংগ করলে ০১ বছরের কারাদÐ বা অনধিক ৫০ হাজার টাকার অর্থদÐ বা উভয় দÐের বিধান রয়েছে। একই অপরাধ পুনঃসংগঠনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দÐের দ্বিগুণ দÐের বিধান রয়েছে। পাটের বস্তার ব্যবহার সংক্রান্ত মাস ভিত্তিক তথ্য নির্ধারিত ছকে প্রতিমাসের ০৫ তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করতে হবে।
এ ব্যাপারে পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আউয়াল সরকার জানান, পাট আইন, ২০১৭ উক্ত আইনের অধীন পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসা পরিচালনায় লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। লাইসেন্স মঞ্জুরী ও নবায়নের জন্য পাট অধিদপ্তর কর্তৃক অন-লাইনে আবেদন করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। অন-লাইন সেবা প্রদানের মাধ্যমে লাইসেন্স মঞ্জুরী ও নবায়ন করা হয়। আইন বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
এ ব্যাপারে পাট অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সদরের উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মোছাঃ খাদিজা খাতুন জানান, পাট উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিবছর দু’বার অর্থাৎ পাট উৎপাদনের সময় ও পাটবীজ উৎপাদনের সময় আমরা পাট চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে পাট চাষীদের তালিকা করে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হয়।