শুক্রবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাঁথিয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ^াসরোধ করে হত্যার অভিযোগ-স্বামী আটক

সাঁথিয়ায় গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ^াসরোধ করে হত্যার অভিযোগ-স্বামী আটক

Views

সাঁথিয়া(পাবনা)প্রতিনিধিঃ পাবনায় সাঁথিয়ার কাশীনাথপুরে হাফসা খাতুন(৩০) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। হাফসা খাতুন বেড়া উপজেলার কুশিয়ারা-বাগজান গ্রামের মাওলানা নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় স্কাইলার্ক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংলগ্ন জাপান টাওয়ারের ভাড়া বাসার তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই অভিযান চালিয়ে নিহতের স্বামী মেহেদী হাসান জিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। জিয়া আমিনপুর থানার টাংবাড়ি গ্রামের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক জাহিদ হোসেন খানের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মামলা দায়ের করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছেন।

নিহত হাফসার মা নাসরিন আক্তার জানায়, প্রায় ১৫ বছর আগে জিয়া জোরপ‚র্বক আমার মেয়েকে বিয়ে করে। তাদের হামিম (১৩) নামের ছেলে ও জ্যোতি (৪) নামের মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই জিয়া টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দিতে থাকে। পরে আমরা ব্যবসা করার জন্য তাকে কিছু টাকা দেই। কিন্তু বখাটে জিয়া ব্যবসা না করে টাকাগুলো নষ্ট করে। কিছুদিন পরে আবার আমার মেয়েকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। মাঝেমধ্যেই মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। মেয়ের সুখের কথা ভেবে মাঝেমধ্যেই টাকা-পয়সা দিতাম। একপর্যায়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতেও বাধ্য হই। কিন্তু তবুও আমার মেয়ে মন পায়নি। জিয়ার বাবা-মা সহ পরিবারের সকলে মিলে আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চালাতো। শুধু দুই শিশুসন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সকল যন্ত্রণা সহ্য করেও সে সংসার করতে চেয়েছে। কিন্তু ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

হাফসার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি আমার মেয়ের হত্যাকারী জিয়ার ফাঁসী চাই। সেই সাথে জিয়ার বোনের জামাই মেহেদীসহ পরিবারের ইন্ধনদাতা সকলের বিচার চাই।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে জিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সেবন করতেন বলেও জানান তাঁরা।

প্রতিবেশীরা জানায়, ‘সন্ধ্যার পরে জিয়া স্থানীয় দুই একজনকে ফোন করে তার স্ত্রীর মৃত্যুর বিষয়টি জানালে স্থানীয়রা এসে টয়লেটের মধ্যে হাফসার গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহ দেখতে পায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাফসার ছেলে হামিম ঘটনার সময় অজ্ঞান হয়ে যায় এবং তাকে মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাংবাদিকদের কাছে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামিম জানায়, তার ফুপা মেহেদী হোসেন হত্যার কাজে তার বাবার একমাত্র ইন্ধনদাতা। হাফসার ৪ বছরের শিশুকন্যাও রাতে ওর বাবা কর্তৃক মাকে অত্যাচারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলছিল, ‘আমি বাবাকে অনেক নিষেধ করেছি মাকে মারতে। তবুও বাবা কথা শোনেনি। ‘

হাফসার মামা কিরণ জানান, আমার ভাগ্নির সাথে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনা স্পষ্ট প্রমাণ করে জিয়া অসহনীয় নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।

সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জা (ওসি)আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাবনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই মামলা করেছেন । যার নং-৭। জিয়াকে বৃহস্পতিবার(১২ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

Share This

COMMENTS