শনিবার- ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নাটোরে এবার আওয়ামীলীগ নেতার ফেন্সিডিল পান করার ভিডিও ভাইরাল!

নাটোরে এবার আওয়ামীলীগ নেতার ফেন্সিডিল পান করার ভিডিও ভাইরাল!

ইসাহাক আলী, নাটোর, ২৩ আগস্ট- চিকিৎসক – শিক্ষিকার ভিডিও ভাইরালের রেস কাটতে না কাটতেই এবার নাটোরের নলডাঙ্গায় ভাইরাল হয়েছে রইস উদ্দিন রুবেল নামের এক আওয়ামীলীগ নেতার ফেন্সিডিল পান করার ভিডিও। রুবেল উপজেলা আওয়ামীলীগের বহিঃস্কৃত সভাপতি ও নাটোর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য। ফেন্সিডিল পানের ওই আসরে ব্রক্ষপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মহসিন আলীতেও এক সাথে ফেন্সিডিল পান করতে দেখা যায়। সম্প্রতি তা “আমি মাতাল ” নামের সামাজিক যোগাযোগ মধ্যম ফেসবুক পেজে ও একই নামের একটি আইডি থেকে পোস্ট করার পর তা এখন সবার হাতে হাতে। রুবেল এটাকে নিজের ভিডিও স্বীকার করলেও তিনি নিয়মিত ফেন্সিডিল পান করেননা দাবি করে বলেন সেদিন নলডাঙ্গা পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনির তাকে ডেকে নিয়ে ফেন্সিডিল খাইয়ে কৌশলে ভিডিও ধারণ করে রেখে বøাক মেইল করতে না পেরে তা এখন প্রকাশ করছেন। তিনি আমাকে রাজনৈতিক ভাবে সামাজিক ভাবে হেয় করতে এসব করেছেন। মহসিনও দাবি করেন মেয়র মনির তাদের ডেকে নিয়ে ফেন্সিডিল সেবন করিয়েছেন। তবে মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানিও না আমার কোন বক্তব্যও নেই।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায় তারা হেটে এসে একটি ছাউনীর নিচে পাকা বাধাই করা ধারীতে বসেন। ছাউনীর উপরে লেখা আছে “সব কিছুতে সাবধান “। পরে রুবেল ফেন্সিডিল পান করে পাশে থাকা মহসিনকে দেন। তিনি পান করে তা পানিতে ফেলে দিয়ে আরো একটা নিয়ে মুখের ছিপি খুলছেন। সেটি শেষ করে সিগারেট ফুকতে দেখা যায়। একই ভিডিও এর দুটো ক্লিপ ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমের দুনিয়ায়। একটিতে মহসিনের চেহারা আড়াল করার জন্য স্টিকার বা স্যাম্বল ব্যবহার করা হয়েছে আর অপরটিতে দুজনের চেহারা স্পষ্ট হলেও সাথে গান সংযোজন করা হয়েছে। তবে ভিডিও গুলোতে দুজনের চেহারা স্পষ্ট হলেও ভিডিও ধারণকারী লুকিয়ে রেখেছেন নিজেকে। তার হাত ও পা দেখা হলেও চেহারা দেখা যাচ্ছে না। মহসিন আলী নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রক্ষপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার স¤পাদক ও সরকুতিয়া এলাকার বাসিন্দা। দুই মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ফেন্সিডিল সেবনের ভিডিওটি ফেসবুকে প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। এ নিয়ে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নিন্দা জানান ।

“আমি মাতাল” নামের ফেসবুকের পেজে পোস্টকরা ওই ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। স্ট্যাটাসে সেখানে লেখা রয়েছে, রইস উদ্দীন রুবেল, এই যদি হয় নেতার চরিত্র! অবিলম্বে মাদক সেবন কারী নেতাদের হাত থেকে নলডাঙ্গা উপজেলা মুক্ত করা হোক এবং তাদের গডফাদারদের চিহ্নিত করা হোক। এছাড়া আমি মাতাল নামে একটি আইডি থেকেও আই মাল খাই রে শিরোনামে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে। এদিকে পেজটি এখন দৃশ্যমান না হলেও প্রোফাইলটি এখনো আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিজের স্বীকার করে রইস উদ্দীন রুবেল বলেন, আমি কোন প্রকার মাদক সেবন করিনা। নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামনা মনির আর আমি একই বাসায় থাকি। সম্পর্কে সে আমার মামা। সব সময় আমি তার সাথে থাকতাম আমি ভাবতেই পারিনি তিনি আমার সাথে এমন করবে বুঝতেই পারিনি। তিনি তার নিজের টাকায় ফেন্সিডিল কিনে আমাকে খাইয়েছে আমি নেশা খোর না কখনো নেশা করিনা মাদক সেবন করিনা। সেদিন একটু খেয়ে পরখ করছিলমা ভারসাম্য রাখতে পারি কিনা। আর সে নিজে খেয়ে তারটা ভিডিও না করে আমাদের টা করে গোপন করে। পরে আমাতে বøাকমেইল করার চেষ্টা করে। আমি তার কথায় রাজি না হওয়ায় তার থেকে দূরে সরে আসায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে এই ভিডিও ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নিউজ করলে সত্য গোপন না করে আমার বক্তব্য প্রচার করবেন। তিনি পৌর আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী। আমাকে বø্যাকমেইল করতে না পেরে এখন এসব করছে। তিনি আরো দাবি করেন, ভিডিওতে যে হাত , ঘড়ি ও পা দেখা যাচ্ছে সেটা মনিরের। এনিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জও করেন।

এ ব্যাপারে ওই আসরে থাকা অপর সেবনকারী মহসিন আলীও দাবি করেন, সেদিন মনির তাদের ডেকে নিয়ে ফেন্সিডিল খাইয়ে ফাসিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনটা ফেন্সিডিলের মধ্যে মনির নিজেই দুইটা খান আর একটার কিছু রুবেল খেয়ে তাকে দেন। তিনি কখনো এগুলো খান না তবে রুবেল বললো একটু খেতে তাই খেয়েছেন। তিনি আরো দাবি করেন, সেখানে তারা তিনজন ছিলেন ভিডিওটা মনির করেছে তিনি খুব নোংরা কাজ করেছেন।

এদিকে ভিডিও ভাইরালের ব্যাপারে নলডাঙ্গা পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমি দেখিনি, কি ভাইরাল হয়েছে। তিনি রুবেলের ভিডিও ভাইরাল করে বø্যাক মেইল করা চেষ্টা করছেন এমন প্রশ্নের ব্যাপারে বলেন,এ বিষয়ে আমি কিছু না তাই এ ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্যও নাই, কে কোথায় কি করছে সে বিষয়টা তিনি অবগত নয়। এদিকে ভিডিওতে দেখা ঘরি স্যান্ডেল ও জুতা তার এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কে কোথায় কি করছে তা তিনি কিছু জানেন।

এদিকে এই বিষয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, রইস উদ্দীন রুবেল বিডিআর বিদ্রোহের সাজাপ্রাপ্ত আসামী। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে হত্যাকারীদের আওয়ামী লীগ করার কোন সুযোগ নেই। তিনি কখনো আ্ওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না। তাকে নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির করার চেষ্টা করা হয়েছিল তাকে বহিঃস্কারও করা হয়নি। সে আওয়ামীলীতের সাধারণ সদস্যও নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার তার কোন সুযোগ নেই। আর জনপ্রিয় মেয়র মনিরের ইমেজ নষ্ট করার জন্য তিনি নাম বলে অপপ্রচার করতে পারেন তবে তা প্রমাণিত না বা ভিডিওতে তা স্পটও না।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম পলাশ জানান ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরা ভিডিওটি তিনি দেখেননি বা শুনেননি। এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

৭৭৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares