
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসাপাতালে চিকিৎসক নেই, সেবা দিচ্ছে এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিএমএফ

২৭ Views
বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসাপাতালে প্রতিনিয়তই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বদলে সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা পত্রে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট। আবার কখনও ওষুধ লিখে দিচ্ছেন ‘ডিএমএফ’ (ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসকরা)। যা আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বলেছেন খোদ চিকিৎসকরাই। তারা বলছেন এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট কিংবা ডিএমএফরা চিকিৎসদের সহযোগী। তারা কোনোভাবেই রোগীর চিকিৎসাপত্র দিতে পারেন না। এটা বেআইনি।
সরেজমিনে ১৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার)) ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসাপাতালের পুরাতন বিল্ডিং এ গিয়ে দেখা যায়, রোগীর দীর্ঘ তবে নেই তেমন কোনো চিকিৎসক। ঐ ভবনের নিচ তালার ৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায় একজন ব্যক্তি রোগীর ব্যবস্থাপনা পত্র লিখছেন। তবে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন। তিনি আশরাফুজ্জামান রনি একজন এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন এই হাসপাতালে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ এখানে মেডিকেল ডা. মোহাম্মদ নাজমুল ইমলাম স্যারের বসেন। তিনি আসেন নি। তত্বাবধায়ক ও আরএমও স্যারের নির্দেশে আমি এখানে রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি।’ আপনি আইননত চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ স্যাররা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি বসেছি।’
তার কাছ থেকে সদ্য ওষুধ লিখে এনেছেন রহমত আলী (৪৫)। তিনি বলেন, কালীগঞ্জ থেকে আসিছি। কোমড় ব্যাথা নিয়া ডাক্তার ওষুধ লিখি দেইল ।খাই দেখি কী হয়।
৬ নং কক্ষের একই চিত্র একই ভবনের ২৯ নং কক্ষে এই কে বসবেন তা নির্ধারিত নেই। তবে এই শিশু বসেন শিশু বিশেষজ্ঞ। ডা. আলামিন মাসুদ। তিনি উপস্থিত নেই। তবে সেখানে রোগী দেখনছেন মশিউর রহমান নামের একজন ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক। জানতে চাইলে তিনি চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে কোনো সদোত্তর দিতে পারেনি।
৯ বছর বয়সি সোহগের মা চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন মশিউর রহমানের কাছে। সোহাগের মা আম্বিয়া খাতুন বলেন, ‘ বেটার কাশ – যাত্রাপুর থাকি আসছি ডাক্তারক দেখাইলং ওষুধ তো লেখি দেইল এলা দেখি কী হয়।
তবে এভাবে হাসপাতালে রোগী দেখাকে পুরোপুরি নিয়ম- বহিভূত মনে করছেন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ড্যাব) কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহফুরাজ রহমান। তিনি বলেন, ‘ এভাবে সরকারি হাসপাতালে এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিএমএফ দিয়ে বহি:বিভাগে রোগী দেখা আইন বহিভূত কাজ। তারা এমবিবিএস চিকিৎিসকেরমত দক্ষ না এতে করে রোগীর ক্ষতি হতে পারে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের সুচিকিৎসারি বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি বলেন, ‘ আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের সু ব্যবস্থপনার জন্য তত্বাবধায়কে বলে আসছি কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। তিনি দুই মাস সময় নিয়েছে কিন্তু ফলাফল শূণ্য। যার কারণে আমরা তাকে সম্প্রতি তিরস্কারের মালা দিয়েছি। তিনি আবার ও ১ মাস সময় নিয়েছে। যদি তিনি হাসপাতালের সেবার মানউন্নয়ন না করেন তাহলে এর থেকে আরো বড় তিরষ্কার তাকে করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মো: শহিদুল্লাহকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহিনুর রহমান শিপন বলেন, ‘এ্যানেসথিয়া অ্যাসিস্ট্যান্ট, ডিএমএফ কেন বহি:বিভাগে রোগীকে সেবা দিবে তারা তো চিকিৎসকের সহযোগী। আর আমরা কোনো নির্দেশনা দেই নি যে তারা রোগীদের সেবা দিবে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব ।‘