
সাঁথিয়ায় মালচিং পেপার ব্যবহার করে ফসল চাষে স্বাবলম্বী আজিজ

জালাল উদ্দিন,সাঁথিয়া(পাবনা)প্রতিনিধিঃ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের তলট দক্ষিণপাড়া গ্রামের আব্দুল আজিজ। তার প্রথম স্ত্রীর নাম লিমা খাতুন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রিমা খাতুন। তবে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক না থাকায় তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানদের নিয়ে তলট দক্ষিণপাড়া গ্রামে বর্তমানে বসবাস করেন।পেশায় তিনি একজন ইনোভেটিভ কৃষক ও কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন।বর্তমানে তিনি কাপড় ব্যবসা করেননা। তার মূল পেশা কৃষি কাজ। তার প্রথম স্ত্রীর তিন মেয়ে,তারা সবাই বিবাহিত।দ্বিতীয় স্ত্রীর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের বয়স ১২ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স নয় বছর। ছোট ছেলের বয়স চার বছর, কিন্ত সে এখন পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হয়নি।
দক্ষিণ পাড়ায় হঠাৎ একদিন তার সাথে কৃষি ইউনিট, প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট (পিপিডি) সংস্থার কর্মকর্তার দেখা হয়। তিনি কর্মকর্তাকে অবগত করেন সে প্রতিবছরই লোকাল জাতের মরিচ ও অন্যান্য ফসল চাষ করতেন । কর্মকর্তা তাকে পিপিডি’র সম্পর্কে জানান এবং প্রথম অবস্থায় তলট দক্ষিণপাড়া মহিলা সমিতিতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। তাকে মালচিং পেপারের মাধ্যমে মরিচ,শসা,চালকুমড়া,ধুন্দল চাষ করার কথা বললে তিনি স্বতঃস্ফুর্তভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এরপর তলট দক্ষিণপাড়া মহিলা সমিতিতে তিনি ভর্তি হন। তাকে মালচিং পেপার ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যের ফসলচাষ প্রদর্শনীর আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে একটি প্রদর্শনী তার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। তার বাড়ীতে একটি গাভী ও একটি বাছুর আছে। এরপর কৃষি ইউনিট এর মাধ্যমে তাকে উন্নত ও আধুনিক হাইব্রিড জাতের মরিচ (বিজলীপ্লাস ২০২০)’র কোকোডাষ্টের ২হাজার ৩০০টি চারা, জৈব ও রাসায়নিক সার, জৈব বালাইনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ প্রদান করা হয়।এছাড়া তাকে দুই দিন ব্যাপী অনাবাসিক প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়। তিনি মরিচ চাষের পর ঐ একই প্লটে দ্বিতীয়বার শসা,ধুন্দল ও চালকুমড়া চাষ করেন। তিনি মরিচ গাছের মরা ডালপালা মাচা হিসাবে ব্যবহার করেন। এই কার্যক্রমের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
তিনি মাঠে তার সুন্দর ফসল দেখে অনেক আনন্দিত ও খুশী হন।তিনি সর্বমোট ৫৮ হাজার টাকার ফসল বাজারে বিক্রি করেন। এর মধ্যে তার মোট খরচ হয়েছিলো ১৬ হাজার টাকা। এতে তার নীটলাভ হয়েছে ৪২ হাজার টাকা।
আব্দুল আজিজ বলেন, এই নতুন ধরনের ফসল ও প্রযুক্তি এর আগে কখনও আবাদ করিনি। এই ধরণের ফসল অধিক নিউট্রিয়েন্ট সমৃদ্ধ,যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এই প্রযুক্তিতে ফসল আবাদ করে আমার উৎপাদন খরচ যেমন-সেচ খরচ,রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব, আগাছা কম হয় এবং মাটির আর্দ্রতা ঠিকঠাক থাকে ।
পরবর্তিতে তিনি পিপিডি’র সংস্থার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরী করেন। তিনি একজন সঞ্চয়ী সদস্য। তিনি এখন পর্যন্ত ঋণ নেননি,তবে কিছুদিন পর ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খুব সুখে শান্তিতে জীবন-যাপন করছেন বলে সংস্থার কর্মকর্তাকে অবগত করেন।
পিপিডির কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার ঘোষ বলেন,মালচিং পদ্ধতিতে মরিচ চাষ করলে সেচ কম লাগে,আগাছা কম হয়,মাটির আদ্রতা ধরে রাখে, ফলে ফলন বাড়ে এবং উৎপাদন খরচও কম হয়। দিন দিন সাঁথিয়া উপজেলায় এই প্রযুক্তি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মরিচ চাষের পর ঐ একই প্লটে শসা ও চালকুমড়া আবাদ করা হয়।