ঋন ও দাদনে দিশেহারা জেলেরা জেলের জালে মিলছে না ইলিশ
সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি। তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে শত শত জেলের জালে মিলছে না আশানুরুপ মাছ। সারাদিন ও রাতে নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতেই অনেক জেলে নদী তীরে ফিরে আসছে। এতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার হাট-বাজার। অপরদিকে জেলে পরিবারগুলো ঋনের কিস্তি ও দাদনের দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারে গত বছর এই দিনে দিন-রাত ইলিশ বেচাকেনায় ব্যস্ত থাকতো ক্রেতা ও বিক্রেতা সেখানে এখন ইলিশ শূন্যতা বিরাজ করছে। তবে জেলেদের জালে মিলছে না কোন ইলিশ। মাছ শিকার না হওয়ার ফলে মাছের আকাল বলে দাবি করছে জেলেরা। মাছ না পাওয়ায় হাজার হাজার জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ইলিশের আমদানি না হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলে ও আড়ৎদাররা।
মাছ বিক্রির বাঁশবাড়িয়া, হাজিরহাট, গোলখালী,কাটাকালী, আউলিয়াপুর ও পাতারচর ঘাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়, ঘাটে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। জেলে ও আড়ৎদাররা অলস সময় পার করছেন।
এই সময় জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে অনেক দিন কিন্তু নদীতে মাছ নেই। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে এবং মাছ শিকার করলে দুই থেকে চারটা মাছ পাওয়া যায়। তা দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকার তেলের খরচও জোগাড় করা যায় না।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ১০হাজার ১শ’ ৭০জন জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞার সময় প্রায় সাড়ে ৫হাজার জেলেকে ২০কেজি হারে সরকারি চাল দেয়া হয়। এদিকে, জেলেদেরকে দাদন দিয়ে এখন বেকাদায় পড়ছে দাদন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় তারা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না।
স্থানীয় জেলেরা জানান, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমাদের সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পরিবার পরিজন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কিভাবে চলবো সে চিন্তায় আছি।
এবিষয়ে দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী মো. মিরাজ খান বলেন, তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে কোন মাছ নেই। জেলেরাসহ আমরা মৎস্য ব্যবসায়ী খুব কষ্টে আছি।
এবিষয়ে উপজেলা মেরিল ফিসারিজ কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম জানান, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্রের ওপর ভারসাম্যহীন আঘাতের এবং তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নদীতে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। উপজেলার নদী সীমার ৮/১০টি স্পট আছে সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে। এই স্পটগুলো ড্রেজিং করলে আবার নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে এই কর্মকর্তা এমনটাই মনে করছে।