বুধবার- ২৬শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১২ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নলডাঙ্গার ইউএনও’র গাড়ির সাথে সংঘর্ষে ঝড়ে গেলো সাংবাদিক সোহেলের প্রাণ

নলডাঙ্গার ইউএনও’র গাড়ির সাথে সংঘর্ষে ঝড়ে গেলো সাংবাদিক সোহেলের প্রাণ

ইসাহাক আলী, নাটোর, ০৯ মে- নাটোরের সিংড়ার নিঙ্গইন এলাকায় নলডাঙ্গার ইউএনও সুখময় সরকারের বেপরোয়া গাড়ির সাথে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও বন্দর স্কুলের শিক্ষক সোহেল আহমেদ জীবন (২৫)। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইউএনওর সরকারী গাড়িতে এ সময় তার স্ত্রী তার কর্মস্থলে যাচ্ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শিরা নিশ্চিত করেছেন। তবে ইউএনও সুখময় সরকারের দাবি দূর্ঘটনার সময় গাড়িতে তার স্ত্রী ছিলেন না তখন তার স্ত্রী তার কর্মস্থলেই ছিলেন। তার গাড়ি তেল নেয়ার জন্য ইউএনও অফিস থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নিঙ্গইন পাম্পে যাচ্ছিল। এ ঘটনায় স্থানীয় সংবাদকর্মি ও জনপ্রতিনিধিসহ সবার মাঝেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোহেল সিংড়া পৌর এলাকার বালুয়া বাসুয়া মহল্লার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে ও আগপাড়া শেরকোল বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের সহকারি শিক্ষক।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকালে মোটর সাইকেলে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক সোহেল আহমেদ জীবন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা নলডাঙ্গার ইউএনও সুখময় সরকারের বেপরোয়া সরকারী গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে সোহেলের মোটর সাইকেলটি ইউএনও এর গাড়ির নিচে ঢুকে যায়। স্থানীয়রা সোহেলকে উদ্ধার করে প্রথমে সিংড়া ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোহেল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মারা যায়। ইউএনও এর সরকারী গাড়িতে এ সময় তার স্ত্রী মানসি দত্ত মৌমিতা ও চালক ছিলেন। মৌমিতা সিংড়া সরকারী গোল-ই আফরোজ সরকারী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা। ওই সরকারী গাড়িতেই নিয়মিত কর্মস্থলে যান ইউএনও পতœী এমনটা জানান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে অনুমতি না নিয়ে সরকারী গাড়ি ব্যবহারের ঘটনায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে আছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, নিয়মিতই ইউএনওর স্ত্রীর কর্মস্থলে সরকারী গাড়িতেই তাকে পৌছে দিয়ে যেতো চালক। একজন ইউএনও এর গাড়ি তার স্ত্রী ব্যবহার করায় তারা ক্ষোভ জানিয়ে এর তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আফজাল হোসেন, মো. সুলায়মান ও মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ইউএনও’র গাড়ি দ্রæত গতিতে সিংড়ার দিকে আসছিলো। নিংগইন পৌঁছলে মোটরসাইকেলে ধাক্কা গেলে চাকায় পিষ্ট হয় সাংবাদিক সোহেল রানা। পরে দ্রæত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কলেজে যান ইউএনও’র সহধর্মিণী মানসী দত্ত মৌমিতা। পরে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে গাড়ি দুটি উদ্ধার করে।

তবে নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার স্ত্রীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, নলডাঙ্গা ছোট উপজেলা, সেখানে পেট্রোল সঙ্কটের কারণে সিংড়ায় পেট্রোল নিতে পাঠিয়েছিলাম। নলডাঙ্গায় সব সময় পাম্প খোলা থাকে না সদর বা সিংড়া থেকে তেল আনা হয়। দূর্ঘটনার সময় তার স্ত্রী কর্মস্থলে ক্লাস নিচ্ছিলেন গাড়িতে ছিলেন না।

এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে , ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিক সোহেল রানাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আল ইমরান।

সিংড়ার ইউএনও এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিহতের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে পরিবারকে সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে ও বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলে ইউএনও এর বক্তব্যের যৌক্তিকতা বা সতত্যা পাওয়া যায়নি। পাম্পে তেল নেয়ার দাবি করা হলেও গাড়ি তেল নিতে পাম্পে যায়নি। এছাড়া নাটোর শহর নলডাঙ্গা থেকে ১২ /১৩ কিলোমিটারের পথ হলেও নিঙ্গইন পাম্প প্রায় ২৫ কিলো দূরে।

এদিকে নলডাঙ্গার একজন রাজনৈক ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, ইউএনও উপজেলার সহকারী কমিশনার ও নিজের গাড়ি সহ দুটো গাড়িই ব্যবহার করেন। একটা তিনি নিজে ও অপরটি পরিবারের লোকজনের জন্য ব্যবহার করেন। এর তদন্ত ও বিচার হওয়া প্রয়োজন।

সাংবাদিক সোহেল রানা পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সহ-সভাপতি, কালের কন্ঠ শুভ সংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন।

১২৭ বার ভিউ হয়েছে
0Shares