
বীরগঞ্জে পাশাপাশি মসজিদ-মন্দির : ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য

১৩ Views
প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে মুসলিম ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্মীয় উপাসনা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসবকে কেন্দ্র করে উভয় ধর্মের ধর্মাবলম্বীরা বলছেন এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্বের বন্ধন। আর এতে করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রীতির এমন বন্ধনের দেখা মিলেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ইটের দেওয়ালের এক দিকে সনাতনী মন্দির অপর দিকে মসজিদ দুই ধর্মের মতবিরোধ ছাড়াই সম্প্রীতির বিরল মেলবন্ধন হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হিন্দু ধর্মের পুরোহিত ও মসজিদের প্রধানের সমন্বয়ে চলে পূজা-অর্চনা এবং নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বীরগঞ্জের ৬নং নিজপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মন্ডলপাড়ায় প্রায় ৩শত বছরের বিষ্ণু মন্দির রয়েছে। ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরটির উত্তরে সংলগ্ন ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় দামাইক্ষেত্র জামে মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করে। সূচনা লগ্ন থেকে মন্দিরে পূজা অর্চনা এবং মসজিদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দীর্ঘ দিন থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চললেও সেখানে কখনো কোনো মতবিরোধের সৃষ্টি হয়নি। বরং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণে মুসলিমদের সহযোগিতা স্থানীয় হিন্দুদের উজ্জীবিত করে রাখে।
বীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল গফুর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দুটি প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার উপস্থিতিতে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডাক্তার খাইরুল আলম বলেন, মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো দিন নামাজিদের কেউ ব্যঘাত সৃষ্টি করেনি। দেওয়ালের অপর দিকেই অবস্থিত মন্দিরের পুরোহিত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মসজিদের কমিটির লোকজনের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করছে।
সার্বজনীন বিষ্ণুমন্দিরের পূজারী তৃপ্তি রানী রায় (৬৬) ও উজ্জ্বল চন্দ্র রায় (৪৫) বলেন, ৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে পূজা অর্চনার কাজ করে আসছি। কোনো দিন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং এলাকার মুসলিমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। মন্দিরের পূজারী ও মসজিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে চলে হিন্দুদের পূজা-পার্বণ।
মসজিদের সদস্য তুহিন ইসলাম বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে ধর্মীয় সহাবস্থানের মাধ্যমে উভয়ের ধর্মের কার্যাদি পালন করে যাচ্ছি, আমরা একে অপরের প্রতিবেশি।
একই গ্রামের বাসিন্দা বীরগঞ্জ উপজেলা হিন্দু কল্যাণ ট্রাষ্ট এর সাধারণ সম্পাদক টিকা রাম রায় বলেন, এক দেওয়ালের এপিঠ ওপিঠ দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। উভয়ে উভয়কে সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। এছাড়া উপজেলার কোথাও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। আমরা হিন্দু-মুসলিম সামাজিক স্বস্থানে বসবাস করে আসছি।
নিজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরল মেলবন্ধন দেখে অভিভূত। ভবিষ্যতেও ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক বন্ধন ধরে রাখতে চাই। এক পাশে পূজা-অর্চনা, অন্য পাশে নামাজ। আমাদের মাঝে নেই কোনো দ্বন্দ্ব, নেই বিভেদ। তাদের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি রয়েছে।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, ‘একপাশে খোল-তাল ও পূজা অর্চনার ধুয়োর ঘ্রাণ। অন্যপাশে আতরের সু-ঘ্রাণ। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে দুটি ধর্মের মানুষ। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ সম্প্রীতি বজায় রেখে ধর্ম পালন করে। এমন সম্পর্ক এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।’