
বাঘার পদ্মার চরে বরই চাষে বিপ্লব-বিদেশে রপ্তানি হবার সম্ভবনা

১৭ Views
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মার চরে বরই চাষে বিপ্লব ঘটেছে। বরই কাঁচা অবস্থায় সবুজ, আর পাকলে লাল, এ ফলটি প্রায় সবারই খুব প্রিয়। এটা এমন একটি ফল, যেটা কাঁচা হোক বা পাকা হোক, যে কোনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, পুষ্টির দিক থেকে প্রায় ১০ প্রকার উপকারিতা রয়েছে এই ফলে। এটি দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশী উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে এর উৎপাদন অনেক বেশি। বিশেষ করে গত দু’বছর , এ অঞ্চলের বরই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হওয়ার কারণে এবার পূর্বের যে কোন বছরের চেয়ে উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত দু’বছর থেকে বাঘায় উৎপাদিত আমের পর বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে বরই ও পেয়ারা। এ অঞ্চলের আম দেশ বিখ্যাত হওয়ার সুবাদে গত ৭-৮ বছর ধরে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল এবং ফ্রান্স-সহ রাশিয়াতে রপ্তানি হচ্ছে। সম্পূর্ণ ফরমালিন ও কেমিক্যাল মুক্ত এই আম ইতোমধ্যে বাঘার সুনাম বয়ে এনেছে। আমের পর গত দু’বছর থেকে বিদেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে বরই ও পেয়ারা। আর এটি সম্ভব হয়েছে কেবল গুনগত মানের কারনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর (১৭ জানুয়ারি) এ উপজেলা থেকে ঢাকার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান “মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনাল ’’ এর মাধ্যমে উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সফল শিক্ষিত কৃষক শফিকুল ইসলাম সানা ও বাউসা এলাকার তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবালের বাগান থেকে রপ্তানি হয় দেড়’শ কেজি করে মোট তিন’শ কেজি থাই বরই। পরবর্তীতে আরো অনেকেই তাদের বাগান থেকে বিদেশে বরই রপ্তানি কারণে ঐ প্রতিষ্ঠা-সহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তারা আশা করছেন, এবারও ঢাকা থেকে বিদেশে ফল রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠান গুলো বাঘায় আসবেন।
বাঘার বাউসা ইউনিয়নের তরুন উদ্যোক্তা শাহিন ইকবাল বলেন, আমাদের দেশে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। তার মধ্যে বরই হচ্ছে অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি এই কুল বা বরই চাষ হয়ে থাকে। তবে রাজশাহী বাঘা, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, সাতখিরা, বগুড়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে ভালো এবং উন্নতজাতের বরই চাষ হয়। এ দিক থেকে মাটির গুনগত মান ভালো হওয়ার কারণে স্বাদে গুনে ভরপুর বাঘা উপজেলায় উৎপাদিত সকল প্রকার বরই। এ উপজেলা থেকে আমের পর গত দু’বছর থেকে দেশের বাইরে রপ্তানি শুরু হয়েছে বরই ও পেয়ারা।
বাঘার পাকুড়িয়া গ্রামের সফল ফল চাষী শফিকুল ইসলাম সানা বলেন, এ উপজেলার মাটি যে কোন ফসল চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। আম এ অঞ্চলের প্রধান অর্থকারি ফসল। আমের পরে পেয়ারা ও বরই চাষ করে আমরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছি। এ ছাড়াও বর্তমানে এ অঞ্চলে নতুন ভাবে উৎপাদ শুরু হয়েছে ড্রাগন ফল, চিয়া-সিড ও ক্যাপসিকাম মরিচ।
তাঁর মতে, বরই দিয়ে চাটনি, আচার ও নানান ধরণের মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয়। কুল বা বরই খেতে অনেক সুস্বাদু। তাই ছোট বড় সবার কাছেই এই ফলটি ভীষণ প্রিয়। বর্তমানে রাজশাহীর বাঘা-সহ দেশের অনেক জায়গায় এখন বানিজ্যিক ভাবে বরই চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এর মধ্যে আপেল কুল, বাউ কুল, নারকেল কুল, থাই কুল, বল সুন্দরী কুল বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন , বরই এর ভিতরে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান (ক্যালরি) আছে যা অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এর ভেতরে সলেবুল ফাইবার এবং ভিটামিন সি, এ, এবং বি ২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায়। যা হজম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাঁর দেয়া তথ্য মতে, বাঘার ৭ টি ইউনিয়ন এবং ২’টি পৌরসভা মিলে এখানে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর বরই উদপাদন হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এটি গতবারের ন্যায় এবারও বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাটির নিচে থাকা খনিজ সম্পদ সেই দেশের অর্থনৈতিক চিত্র পুরোপুরি বদলে দেয়, কিন্তু আমাদের দেশে খনিজ সম্পদ নেই। তবে আমাদের দেশের মাটি অত্যান্ত উর্বর। শুধু প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষাবাদ। এ ক্ষেত্রে কৃষি খাতে শিক্ষিত যুবক তথা তরুণরা এগিয়ে এলে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হবে । তিনি তরুণ বেকার যুবকদের কৃষিতে এগিয়ে আসার জন্য বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করছেন বলে জানান ।