তদন্ত ওসি জহুরুল হকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন রংপুরে সাক্ষীদের মামলার হুমকি-বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ
তারাগঞ্জ (রংপুর)প্রতিনিধিঃ অভিযোগের সাক্ষী দিতে গিয়ে হেনস্তার শিকারে অভিযোগ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী। রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মোঃ রায়হানের অফিসের এসটনো (অফিস সহকারি) বাবুলের সহযোগিতায় ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বরাবর ওই ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক ( তদন্ত) জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ।
গতকাল বুধবার (২৮ আগষ্ট) দুপুরে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব তারাগঞ্জ উপজেলা শাখার অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযোগকারী ভুক্তভোগী নাজমুল ইসলাম । তিনি জানান, চলতি বছর ১৪ জুন তারাগঞ্জ থানায় একটি জুয়ার মামলা হয় । সেই মামলার ৩ নং আসামি ইমরান হোসাইন তার একটি মোবাইলকে কেন্দ্র করে তারাগঞ্জ থানার এসআই আমিনুল ও তদন্ত ওসি জহুরুল ইসলামের নামে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগে আমি সহ আরও ৫ জনকে সাক্ষী করেন ইমরান।
ইমরানের ওই অভিযোগের তদন্ত সময় রংপুর এ সার্কেল অফিস থেকে সাক্ষীদের নোটিশ করেন। অদ্য ২১ আগষ্ট আমি ও সাক্ষী সোহেলসহ গিয়ে সার্কেলের কাছে সাক্ষী ও জবানবন্দি দিয়ে আসি । কিন্তু পরের দিন ২২ আগষ্ট এ সার্কেল অফিসের এসটনো (অফিস সহকারি) বাবুল মুঠোফোনে তার পরিচয় দিয়ে, কিছু কাজ বাকি আছে মর্মে জানিয়ে আবারও ২৫ আগষ্ট সার্কেল অফিসে আমি ও সোহেলকে আসতে বলে । নিয়মতান্ত্রিক তদন্তের অংশ ভেবে আমরা দুইজন ২৫ আগষ্ট দুপুর ১২.৩০ মিনিটে এ সার্কেল অফিসে উপস্থিত হই। এরপর আমাদের দুইজনকে এ সার্কেল স্যারের সাথে দেখা না করিয়ে দুপুর ২টার সময় অন্য একটি কক্ষে ডেকে নেয় এসটনো (অফিস সহকারি) বাবুল । সেই কক্ষে ঢুকেই দেখতে পাই অভিযুক্ত তারাগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম একটি চেয়ারে বসে আছেন । সালাম বিনিময়ের পরেই ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম আমাকে উদ্যেশ্য করে বলেন, নাজমুল – সোহেল তোরা এখানে কেন ? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস কোথায় পেলে ? তোদের একটুও কলিজা কাপল না ? আমি তোদের বিরুদ্ধে মামলা করব । এজাহার লিখে এনেছি । এই নে পরে দেখ। আমি তোদের মত নিচু পরিবারের থেকে এসেছি নাকি যে চাকরি না করলে চলবে না। আমি ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলামকে বলি, স্যার আপনারা মোবাইল দিচ্ছেন না বিধায় ইমরান অভিযোগ করছে । আমরা যেহেতু বিষয়টি জানি তাই আমাদের সাক্ষী করেছে । এ কথা শোনার পরপরই জহুরুল স্যার আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এক প্রকার মারমুখো আচরণ শুরু করে ও দুইটি কাগজে স্বাক্ষর নিতে চেষ্টা করে । আমরা কোনমতে সার্কেল অফিস থেকে বের হয়ে রংপুর শহরের দিকে যাই । উক্ত সময়ে এ সার্কেল নিজ কার্যালয়ে না থাকায় তাহার হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়টি জানাই। দুঃখজনক বিষয় হল, ভুক্তভোগীরা যে ওসি তদন্ত জরুল ইসলামের হাত থেকে বাঁচার জন্য লিখিত অভিযোগ করেছে , সেখানে অভিযোগ তদন্তকারীর কার্যালয়েই ওই তদন্ত ওসির দ্বারায় উল্টো মামলা দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি করেন। ভুক্তভোগীরা আর কত ভোগান্তির শিকার হলে বিচার পাবে?
নাজমুল ইসলাম আরও জানান, ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম ও বি সার্কেল আবু আশরাফ সিদ্দিকি একসময় একই ব্যাচের ছিল। তাই বি সার্কেলের সাথে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক । সেই সম্পর্কের ক্ষমতা ব্যবহার করে ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম তার অপকর্ম চালায় । ১৪ জুন তারাগঞ্জ থানায় জুয়ার মামলাটি হওয়ার সময় টাকা খেতে না পারায় ওসি তদন্ত জহুরুল ইসলাম তার সাগরেদ (ভক্ত) এসআই আমিনুলকে দিয়ে ৩ নং আসামি ইমরানের বাড়িতে পাঠায় ও তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক একটি মোবাইল নিয়ে আসে । এরপর মোবাইল আটকিয়ে রেখে ঘুষ বাণিজ্যের আশায় একের পর এক কেলেংকারিতে জড়িয়ে পরে ওই মামলার আয়ু এস আই আমিনুল ও তদন্ত জহুরুল হক। মোবাইলটির সম্পর্কে না এজাহারে কোন কিছু উল্লেখ করেন , না চার্জশিটে । বেশকিছুদিন নানান টালবাহানায় অতিবাহিত করেন । মোবাইলটি না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ইমরান অভিযোগ করে। উক্ত অভিযোগের তদন্ত বি সার্কেলকে না দিয়ে এ সার্কেলকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ । ফলে বি সার্কেলের দ্বারায় অনৈতিক ফায়দা নেওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় ওই তদন্ত ওসি জহুরুল হকের। এদিকে এ সার্কেল মোবাইল নিয়ে তদন্ত শুরু করলে মাথা খারাপ হয়ে যায় তদন্ত ওসির। মূলত এই কারণেই আমাকে ও আরেক সাক্ষী সোহেলকে এভাবে মামলার হুমকি দেয়। একটি অভিযোগের সাক্ষী হয়েছি বলে আমি ও সোহেল তদন্ত ওসি জহুরুলের দ্বারায় এ সার্কেল অফিসে হেনস্তা ও মামলার হুমকির সম্মুখীন হয়েছি আমরা। তাই আমি উক্ত ঘটনার ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে সাক্ষী সোহেল জানান, ঘটনার দিন আমি ও নাজমুল কে ধোঁকা দিয়ে এ সার্কেল স্যারের সাথে দেখা না করিয়ে যার ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল তাকে আমাদের সামনাসামনি করে এ সার্কেল অফিসের এসটনো বাবুল । এই বাবুলের সহযোগিতায় ওসি তদন্ত জহুরুল হক আমাদের সার্কেল অফিসের একটি ঘরে লাঞ্চিত করেন। মামলার ভয় দেখায় । আবার আমাদেরকে জোরপূর্বক ফাকা কাগজে স্বাক্ষর নিতে অনেক চেষ্টা করেন । ভয়ে আমরা কোনমতে বেরিয়ে আসি। আমি ওই তদন্ত ওসির বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে পূর্বের অভিযোগকারী ও মোবাইল মালিক ইমরান জানান, বাধ্য হয়ে অনেক দিন ঘুরে, অনেক টালবাহানা দেখে বিরক্ত হয়ে, আমি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার অভিযোগের সাক্ষীদের গত ২৫ আগষ্ট ডেকে নিয়ে হুমকি দেয় ওসি তদন্ত জহুরুল হক। পরে বিষয়টি জেনে আমরা আলোচনা করে ওই ঘুষখোর , দুর্নীতিবাজ, জুলুমবাজ, আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি ডিউকের পা চাটা দালাল তদন্ত ওসি জহুরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আমরা আশা করছি যতই জুলুমের শিকার হই না কেন, ন্যায় বিচার পাবই ।
ঘটনার বিবরণী শুনে এ্যাডভোকেট শিপন সাহা জানান, থানায় উদ্ধার করা অথবা আসামির নিকট থেকে প্রাপ্ত জিনিসপত্র সিজার লিস্ট না করা আইনত অনৈতিক কাজ বলে মন্তব্য করেন।
রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মোঃ রায়হান জানান, মোবাইলকে কেন্দ্র করে হওয়া অভিযোগের স্বাক্ষগ্রহণ আমি আগেই নিয়েছি। পরবর্তীতে ঠিক কি কারণে এসটনো বাবুল ও তদন্ত ওসি জহুরুল ওই স্বাক্ষীদের আমার অফিসে ডেকে এনে এমন আচরণ করেছেন তা আমি জানি না। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ম্বাক্ষীর পাঠানো তথ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছি। অফিসের ব্যস্ততার কারণে বিষয়টি নিয়ে পরে আর খোঁজ নিতে পারি নাই। তবে ভুক্তভোগীরা ন্যায় বিচার পাবে শতভাগ, এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেন।
রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহাজাহান জানান, মোবাইল নিয়ে লিখিত অভিযোগের ঘটনায় সাক্ষীদের ডেকে মামলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো অপেশাদারিত্ব আচরণ। ওই ঘটনায় আরেকটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে তারাগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জহুরুল হক যদি এমনটা করে থাকেন তবে সেটি এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন । এ ব্যাপারে আমি দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি ।