শুক্রবার, ২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসককে মারধর, চিকিৎসাসেবা বন্ধ

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর জেরে চিকিৎসককে মারধর, চিকিৎসাসেবা বন্ধ

Views
কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুর জেরে কর্তব্যরত চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় আইসিইউ, সিসিইউসহ হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে, কাজে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ সব ধরনের কর্মচারীরা।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সিসিইউতে ভর্তি থাকা কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার আবদুল আজিজ নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। স্বজনদের অভিযোগ, ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তার স্বজনেরা। একপর্যায়ে তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক সজীব কাজিকে কিল ঘুসি মাটিতে ফেলে ব্যাপক মারধর করেন এবং হাসপাতালে ভাঙচুর চালান।
হাসপাতালের চিকিৎসক জাহিদুল মোস্তফা বলেন, সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরও কয়েকজন যুবক চিকিৎসককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। ভাঙচুর চালানো হয় আইসিইউ, সিসিইউসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে। নানা সরঞ্জামও নিয়ে যাওয়া হয়। আহত চিকিৎসককে আশংকাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের সিসিটিভিতে ঘটনার এক ফুটেজে দেখা যায়, চারজন যুবক চিকিৎসক সজীবকে ধরে মারধর করছে। একপর্যায়ে চিকিৎসক জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। ফুটেজে হামলাকারী দুইজনকে ইতিমধ্যে শনাক্তও করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আসিফ ও মেহেদী নামের ওই দুইজন চিকিৎসাধীন মারা যাওয়া রোগীর স্বজন নন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেওয়া হবে না বলেও জানিয়ে দেন তারা। এমনকি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঢুকে জোরপূর্বক চিকিৎসা কার্যক্রমও বন্ধ করে দেন। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছেন চিকিৎসক-ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর স্টাফরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোনো স্টাফই কাজে ফিরবে না। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করতে হবে। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। তারপর সেবা।
ওয়ার্ড কর্মীদের নেতা শোভন দাশ বলেন, গেল তিন মাস কোনো ধরনের বেতন পাইনি। তারপরও আমরা সেবা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এখন নিজের ওপর হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তা যদি না থাকে তাহলে কীভাবে কাজ করব আমরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (প্রশাসন) জিআরএম জিহাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সমাধানে আলোচনায় বসেছেন চিকিৎসক-নার্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈঠকটিতে সিদ্ধান্ত না আসলে অনির্দিষ্টকালের কর্ম-বিরতিতে যেতে পারেন হাসপাতালের দায়িত্বরতরা।
Share This

COMMENTS