শুক্রবার- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রিটেনকে সাগরে তলিয়ে দিতে রাশিয়ার একটি সারমাটই যথেষ্ট?

ব্রিটেনকে সাগরে তলিয়ে দিতে রাশিয়ার একটি সারমাটই যথেষ্ট?

ব্রিটেন একটি ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র। সুতরাং এটিকে চিরতরে সাগরে তলিয়ে দিতে রাশিয়ার একটি সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রই যথেষ্ট। এমন মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক দিমিত্রি কিসলিয়োভ।ব্রিটেনের রুশ-বিরোধী হুমকির জবাব দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই সাংবাদিক।

রাশিয়ার নিউজ চ্যানেল রাশা-টুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিসলিয়োভ এক টেলিভিশন টক-শোতে অংশ নিয়ে বলেন, রাশিয়া মুহূর্তের মধ্যে ব্রিটেনকে মহাসাগরের গভীরে তলিয়ে দিতে পারে এবং এজন্য সম্প্রতি মোড়ক উন্মোচন করা একটি সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রই যথেষ্ট।

তিনি বলেন, “তারা কেন বৃহৎ রাষ্ট্র রাশিয়াকে পরমাণু অস্ত্রের হুমকি দেয়, যখন তারা নিজেরা সামান্য দ্বীপরাষ্ট্র এবং রুশ পরমাণু অস্ত্রের আঘাতে যারা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে?”

এই রুশ সাংবাদিক বলেন, “সারমাট বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্য কিংবা ব্রিটেনের মতো একটি দেশকে ধ্বংস করতে একটি সারমাট ক্ষেপণাস্ত্রই যথেষ্ট।

কয়েকদিন আগে ব্রিটিশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হিপপি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। তিনি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন।

রাশিয়ার সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ১০টি পর্যন্ত পরমাণু বোমা বহন করতে এবং কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আমেরিকা ও ইউরোপের সবগুলো দেশ সারমাটের পাল্লার আওতায় রয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু সম্প্রতি এই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেন।

সত্যিই কি সারমাট ব্রিটেনকে সাগরে তলিয়ে দিতে পারবে?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি বলেছেন, সারমাট নামের পরমাণু বোমা বহনকারী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের সবচেয়ে সেরা এবং রাশিয়াকে যারা হুমকি দেয় এখন থেকে সেই শত্রুদের দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষার পর ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, সারমাট বিশ্বের যেকোনও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

তার ভাষায়, “এই ক্ষেপণাস্ত্রের সমকক্ষ আর একটিও এখন পৃথিবীতে নেই এবং আসছে বহু বছরেও তা হবে না। এটি আসলেই একটি অদ্বিতীয় অস্ত্র। এটি রাশিয়ার যুদ্ধের সক্ষমতা অনেক শক্তিশালী করবে। যারা ক্ষিপ্তভাবে উগ্র ও আগ্রাসী কথাবার্তা বলে রাশিয়াকে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের এখন থেকে দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হবে।

বহু বছর ধরে চলছে ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরির কাজ। বেশ কবার এর উৎক্ষেপণ পেছানোর পর এমন সময় এটির সফল পরীক্ষা চালানো হল যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার দুই মাস হতে যাচ্ছে।ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে রাশিয়া পেশি শক্তি প্রদর্শনের উপযুক্ত সময় বেছে নিয়েছে, বলছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। তবে বহু বছর চেষ্টার পর ক্ষেপণাস্ত্রটির উৎক্ষেপণ রাশিয়ার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

যা বলছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসের খবর, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশটির উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত প্লেসেত্স্ক মহাকাশ বন্দর থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয় ২০ এপ্রিল বিকালে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি উৎক্ষেপণের পর আকাশে থাকা অবস্থায় পুরো সময় তার যেসব বৈশিষ্ট্য থাকার কথা সেই অনুযায়ী কাজ করেছে। ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে কামচাটকা উপদ্বীপে গিয়ে সেটি সফলভাবে তার টার্গেটে আঘাত হেনেছে।

ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের বিভিন্ন দিক থেকে তোলা ভিডিও প্রকাশ করেছে রাশিয়া। বিবিসি নিউজে প্রকাশিত এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিকট শব্দ করে মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রটি। তীব্র বেগে আগুন ও ধোঁয়া বের হয়ে আসছে ক্ষেপণাস্ত্রটির নিচের অংশ থেকে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এটি চলার পথ পরিবর্তন করে তার লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এটি উৎক্ষেপণ করতে যে যানটি সাহায্য করে সেটি শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে চলে। এর ওয়ারহেডগুলো আলাদা আলাদা লক্ষে আঘাত হানতে পারে। এতে যে কটি ওয়ারহেড রয়েছে, যে গতিতে এটি যাত্রা করে তাতে সারমাট বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে নতুন এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ করার কাজ চলমান।

সারমাট সম্পর্কে আরও যা জানা যাচ্ছে

বার্তা সংস্থা তাস এই ক্ষেপণাস্ত্রটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রাচীনকালে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কাজাখস্তান অঞ্চলে বাস করা সারমাটিয়ান নামে একটি যাযাবর গোত্রের নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে। সেই বাইশ বছর আগে দুই হাজার সালে এটির কাজ শুরু হয়।

দফায় দফায় এর নকশা ও কৌশল পরিবর্তন করা হয়। এটি তৈরির খরচও বেড়েছে অনেকবার। ২০১৪ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন সারমাট দক্ষিণ থেকে উত্তর মেরু উড়ে যেতে সক্ষম।

তাস লিখেছে সারমাট যে কটি পরমাণু ‘ওয়ারহেড’ বহন করতে পারে তার ওজন ১০ টনের মতো। ক্ষেপণাস্ত্রটির নিজের ওজন দুইশ’ টন। এটি চলার পথ পরিবর্তন করতে সক্ষম তাই এটিকে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা কঠিন।

২০১৫ সালে এটি তৈরির কাজ শেষ হয় তবে এটির পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ বারবার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর একটি ‘প্রোটোটাইপ’ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালে এর ব্যবহার শুরু করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছিল। সোভিয়েত আমলের ভয়েভোদা ক্ষেপণাস্ত্র যেটি ১৯৮৮ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটির স্থলাভিষিক্ত হবে সারমাট। এটি ব্যবহারে রাশিয়াতেই প্রস্তুত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, বলেছেন পুতিন।

রাশিয়ার মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা রসকসমসের মহাপরিচালকের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, এই বছরের অক্টোবরের দিকে তারা রাশিয়ার মিসাইল রেজিমেন্টকে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রেরণের কাজ শুরু করবে। সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে

৭১ বার ভিউ হয়েছে
0Shares