জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশকে তার নিজস্ব-সম্পদ নির্ভর পরিকল্পনা করতে হবে
আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে অনুষ্ঠিত “কপ ২৯ ফলাফল: বাংলাদেশকে স্ব-নির্ভর জলবায়ু পরিকল্পনা করতে হবে” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উক্ত সম্মেলনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, কপ সম্মেলন থেকে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে তা বিপদাপন্ন দেশগুলোর ন্যূনতম ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদার তুলনায় খুবই কম, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠার সক্ষমতা অর্জনের চাহিদা মেটাতে মোটেই যথেষ্ট নয় বরং জলবায়ু অর্থায়নের নামে ঋন নির্ভরতা বাড়াবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেবে। ভবিষ্যৎ জলবাযু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশেকে তার নিজস্ব সম্পদ নির্ভর জলবায়ু পরিকল্পনা তৈরির উপর গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডি এর জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি থেকে মোঃ শামসুদ্দোহা-সিপিআরডি (সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ) জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম, সিডিপি (কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ), মোঃ কাওসার রহমান, বিসিজেএফ (বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম), আমিনুল হক-ইক্যুইটিবিডি, মোতাহার হোসেন-বিসিজেএফ, জনাব শরিফ জামিল প্রমূখ অংশ নেন এবং বক্তব্য রাখেন। কপ-২৯ ফলাফলের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশন থেকে মোঃ আবুল হাসান।
আবুল হাসান তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, এবারের বাকু সম্মেলনে সর্বাধিক জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অগ্রাধিকারভিত্তিক দাবিগুলো বিশেষ করে প্রশমন ও অভিযোজন তহবিলের ভারসাসাম্যহীনতা দুর করা, ক্ষয়-ক্ষতি তহবিল বৃদ্ধি ও অ-অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতির অন্তর্ভুক্তি, নতুন জলবায়ু অর্থায়ন (এনসিকিউজি) এর পরিমাণ ও কর্মকাঠামোর বিষয়ে সুনিদিৃষ্ট করার দাবি থাকলেও গুরুত্ব পায়নি। তিনি সরকারের জন্য কয়েকটি সুুপারিশ তুলে ধরেন। ১) জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলায় বৈশ্বিক সাহায্য ছাড়াই দেশকে নিজস্ব পরিকল্পনা করা উচিত, ২) বিদ্যমান জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশলগত পরিকল্পনার পর্যালোচনা করা দরকার এবং নিজস্ব সম্পদ দিয়ে স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক অংশগ্রহনমূলক অভিযোজন পরিকল্পনা করা, ৩) সরকারের ২০২৫ সাল পরিবর্তি এনডিসি কোন উচ্চাভিলাষী পর্যালোচনায় না যাওয়া।
মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, কপ-২৯ তে উন্নত দেশগুলো কৌশলে বৈশ্বিক ১.৫ ডিগ্রী তাপমাত্রার লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসছে। উন্নত দেশগুলো প্যারিস চুক্তির শর্তগুলো থেকে সরে গিয়ে সকল দায়বদ্ধতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা জলবায়ু তহবিল প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল দেশকে শোষণ ও আধিপত্ত বিস্তার করতে নব্য উদারনীতিবাদ নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করছেন। তাই আগামী সম্মেলনে জলবায়ু সম্মেলনে তহবিল পেতে আমাদের উপনিবেশিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তনে সংগ্রাম করতে হবে।
মোঃ কাওসার রহমান সমালোচনা করে বলেন, ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিলের নামে উন্নত বিশ^ আমাদের ফাঁদে ফেলছে। আমরা যদি বেসরকারি খাত এবং বহুপাক্ষিক ব্যাংকগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করি, তাহলে আমরা আরো ফাঁদে পরবো। উন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নের নামে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলো কৌশলে তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত কপ-২৯ সম্মেলনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা উদ্ভাবনী ও কৌশলী ছিল না। বরং তারা দরকষাকষীতে সিএসও/সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারতো, কিন্তু সরকার তা করেনি। তিনি সরকারকে পরের কপ সম্মেলনের জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করতে বলেন। কারণ, আগামী ব্রাজিল সম্মেলন ইন্টারসেকশনাল এ্যাপোস গ্রহণ করা হবে।
মোতাহার হোসেন আগাম প্রস্তুতি এবং দক্ষতা না থাকার কারণে সরকারকে তহবিলে পেছনে না দৌড়াতে পরামর্শ দেন। বরং, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যারা দরকষাকষীতে কার্যকরী ভ‚মিকা রাখতে পারবেন, তাদেরকে সচল ও যুক্ত করার উপর তাগাদা দেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী সমালোচনা করে বলেন যে, সকল দেশগুলো তাদের পরিকল্পনা ঋণ নির্ভর ও পরামর্শের ভিত্তিতে করছে যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপদজ্জনক। ডেলটা প্লান-২০৩০ তার একটি উদাহরণ, যা আমাদের নিজস্ব জ্ঞান ও সম্পদের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তিনি সরকারকে সকল জলবায়ু সম্পর্কিত অথবা উন্নয়ন পরিকল্পনা পর্যালোচনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।