রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোরার ইলিশায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও জমি দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ

ভোরার ইলিশায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও জমি দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ

২১৮ Views

ভোলা প্রতিনিধি : ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ডের চরআনন্দ পার্ট-১ নামক এলাকার বাসিন্দা মৃত আবদুস সহিদের ছেলে মাইনউদ্দিন হাওলাদারের (৫২) বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পেশী শক্তি ব্যবহার করে ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে যান। পুলিশ গিয়ে ঘর নির্মান করায় কাজ বন্ধ করে দিলেও মাইনুদ্দিন তাদের নিষেধ না মেনে ঘর করা কাজ করছেন। ঘর নির্মানের জমিটি বায়না ও ক্রয় সূত্রে মালিক পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা কবির হোসেন বেপারী।
গত কাল (১৮ সেপ্টেন্বর) বুধবার দুপুরে সরজমিনে স্থানীয়দের ও জমির মালিকের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মমিন আলী হাওলাদারের ওয়ারিশগণ হতে ১৬৪ নং খতিয়ানে ৩৭০ নং দাগে খরিদ সূত্রে ৩ শতাংশ, একই খতিয়ান ও দাগে ওসিমন বিবি’র ওয়ারিশগণ থেকে ৬ শতাংশ-মোট ৯ শতাংশ জমি ক্রয় করেন মোঃ কবির বেপারী।
একই খতিয়ান ও দাগে মাইনউদ্দিন হাওলাদারের ৭ শতাংশ জমির উপর পূর্বের ভিটা ও পুকুর রয়েছে। কবির ব্যাপারির ৯ শতাংশ জমি দিতে নারাজ মাইনুদ্দিন হাওলাদার। তিনি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দিয়ে জোর করে কবির বেপারীর ক্রয়কৃত জমির মধ্যে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মাইনুদ্দিনকে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার ঘর নির্মাণে বাধা দিলেও তা তোয়াক্কা না করে ঘর নির্মান কাজ চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে জমির মালিক কবির হোসেন বাদী হয়ে ভোলা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারায় মাইনউদ্দিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। যার মামলা নং-৩৪২/২৪। উক্ত মামলা আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত বিরোধপূর্ণ জমিতে কোন ধরনের কাজ না করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু মাইনুদ্দিন আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে ঘর নির্মাণের কাজ চলমান রেখেছেন। ইলিশা ফাঁড়ির পুলিশ জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পরে মাইনুদ্দিন ফের ঘর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যায়। মাইনুদ্দিন কোন আইনকেই তোয়াক্কা করছেন না এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের কথাও শুনছেননা। যার ফলে ওই স্থানে আইন শৃংঙ্খলা অবর্নতির আশংকা দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, জমিজমা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বিগত ২০১৪ সালে মাইনউদ্দিন হাওলাদারের ওয়ারিশগণের মধ্যে থেকে (মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মাজেদ হাওলাদার, হাসনুর বেগম, ছালমা খাতুন, মাসুমা খাতুন, সুফিয়া খাতুন ও আকবর) ৭ ওয়ারিশের চরআনন্দের এস এ ৯৯ নং খতিয়ানের ৩১৩ নং দাগের-৫৩ শতাংশ ও এস এ ১৬৪ নং খতিয়ানে ৩৭০ নং দাগে- ২৯ শতাংশ এবং এস এ ১০১ নং খতিয়ানে ৩১৪, ৩১৫ নং দাগে-২ শতাংশসহ মোট ৮৪ শতাংশ জমি বায়না সূত্রে মালিক হিসেবে দখলে আছেন কবির হোসেন বেপারি। তখনকার বায়নাকৃত জমির রেকর্ডে ত্রæটি থাকায় ওয়ারিশগণ বিক্রিত জমির দলিল দিতে না পাড়ায় ৩’শ টাকার স্ট্যা¤েপ বায়না চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ও তাদের এনআইডি ফটোকপি, স্ট্যাম্প সাইজ ছবি, মূল দলিল, বি এস রেকর্ডের কাগজপত্র ও জমির দখল কবির বেপারীকে বুজিয়ে দেন। পরে বিএস রেকর্ডের ত্রæটি সমস্যা সমাধান করে আসলে বিক্রেতাগণ কবির হোসেনকে দলিল দিবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু বি এস জরিপ রেকর্ড সংশোধন হয়ে আসার পর কবির হোসেন দলিলের জন্য গেলে বিক্রেতাগণ বিভিন্ন তালবাহান শুরু করেন এবং সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি দেন। কারন জমির বর্তমান মুল্য ১০ গুন বেড়ে গেছে। তাই বর্তমানে কিছু কুচক্রী মহলের ইন্ধনে জমির দলিল দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ করলেও বিক্রিত জমির দলিল দিতে গড়িমসি করছেন বিক্রেতাগণ।
ভূক্তভোগী কবির হোসেন বেপারী জানান, আমি ২০১৪ সালে মাইনুদ্দিনের ওয়ারিশগণের কাছ থেকে জমি ক্রয় করে সম্পূর্ন মুল্য পরিশোধ করে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে ভোগ দখলে আছি। জমির রেকর্ডে কিছু সমস্যা থাকায় তখন দলিল দিতে পারেননি তারা। আমি অনেক টাকা পায়সা খরচ করে রেকর্ড সংশোধন করেছি। এখন তারা একটি পক্ষের চক্রান্তে আমাকে দলিল দিতে তালবাহানা করছে। আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ও হয়রানী করে আসছে। আমি যাতে ক্রয়কৃত জমির দলিল পেতে পারি সে জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছি।
এছাড়াও মাইনুদ্দিন আমার ক্রয়কৃত জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ঘর নির্মান করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাইনুদ্দিন তা মানছেন না। আমি ওই জমি উদ্ধারেও প্রশাসনের সহযোগীতা চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাইনউদ্দিন হাওলাদারের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের ৭ ওয়ারিশগন কবির হোসেন বেপারীর কাছে ৮৪ শতাংশ জমি ২০১৪ সালে বিক্রি করে স্টাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন সত্য। তবে আমি ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ০৭ শতাংশ জমি বি এস জরিপ ও নামজারি করে বর্তমানে সেই জমিতে ঘর করে দখলে আছি। আমাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এসকল মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করা হয়েছে। স্থানীয় আবুল হাজারি, কাশেম, মাওলানা বাবুলসহ অনেকে জানান, মাইনুদ্দিনের ৭ শতাংশ জমি তার ভিটায় ঠিক আছে, তিনি তা ভোগ করছেন, তিনি ওয়ারিশদের জমি দিতে নারাজ, তাদেরকে বিভিন্ন ভয়ভিতি দেখিয়ে শান্ত পরিবেশকে অমান্ত করার পায়তারা করছে, আমরা তার সঠিক বিচার দাবী করছি।

Share This