জালাল উদ্দিন,সাঁথিয়া(পাবনা) : সমাজ আলোকিত করা ও মানবিক সেবার উদ্দেশ্যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে শিক্ষার্থী সহযোগিতা নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর নেতৃত্বে ছিলেন ওই এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন জিম । তিনি শিক্ষার্থী সহযোগিতা নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোক্তা। দীর্ঘ নয় বছরের সামাজিক ও মানবিক সেবায় নিঃস্বার্থ অবদান আজ তাকে এনে দিয়েছে বেস্ট ভলিন্টিয়ার পুরস্কার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়মূলক ও দাতব্য সংস্থা ভলান্টিয়ারি সার্ভিস ওভারসিজের(ভিএসও বাংলাদেশ) তাকে এ পুরস্কারে ভ‚ষিত করেন। গত ৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ভলান্টিয়ার দিবস উপলক্ষ্যে এক অনুষ্ঠানে এ ষ্ঠুরস্কার দেওয়া হয় তাকে। এতে সারা দেশ থেকে সেরা ২০জন ভলান্টিয়ারকে বেস্ট ভলান্টিয়ার হিসেবে মনোনীত করা হয়। এতে সারাদেশের মধ্যে ৫ম এবং রাজশাহী বিভাগ ও পাবনা জেলার মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করেন মেহরাব হোসেন জিম
মেহরাব হোসেন বেড়ার সান্যাল পাড়ার মাসুদ রানা বিপ্ল¬বের ছেলে ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ভিএসও বাংলাদেশের কান্ট্রিডিরেক্টর কবিরুল হাসান কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, গেø¬াবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশনের কান্ট্রিডিরেক্টর ড. রুবাবা খন্দকার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড.খন্দকার মোকদ্দেম হোসাইন,ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন রোলান্ড ফরবেস ইউএনএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর মাসাকি ওয়াটাবে, সুইডেন দ‚তাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেস ব্যাকস্ট্রোম, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক ডিরেক্টর এলেনা জে ট্যান্সি ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদ‚ত মি.এন্ড্রে কারস্টেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত,২০১৬ সালের মার্চ মাসে পাবনার বেড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরাব হোসেন জিম তার পাঁচ জন বন্ধুকে নিয়ে শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন এর যাত্রা শুরু করেন। সে এবং তার পাঁচজন বন্ধু সিদ্ধান্ত নেয়, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে তা মানবকল্যাণের কাজে লাগাবে। প্রোগ্রামের জন্য তারা পাঁচ জন প্রোগ্রামের আগে তাদের সহপাঠীদের থেকে ৫-১০ টাকা করে তুলতো। মেহেরাব ১০০,তার বোন ১০০ আর তার ক্লাসের সকল বন্ধুরা মিলে ৩০০ টাকা দেয়। এই ৫০০ টাকায় ১০ জন গরীব অসহায়কে ময়দা ও সেমাই কিনে দিয়ে শুরু করে সংগঠনের কার্যক্রম ।
এ সংগঠনের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে স্কুলে স্কুলে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। বেড়ার প্রত্যন্ত স্কুলগুলোতে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা করে শিক্ষার্থী জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টার মাধ্যমে আলোকিত সমাজ নির্মাণের পথে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনটির ২টি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি রয়েছে। এছাড়া এতিমখানা পরিচালনা সহ ২টাকায় আমেজ প্রোজেক্টের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে সহযোগিতা দেয় এ সংগঠন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতেও তাদের কার্যক্রম রয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সেরা ভলিন্টিয়ারি পুরস্কার জয়ী মেহরাব হোসেন জানান, টিফিনের টাকায় মাত্র ৫০০ টাকায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসরে। অনেকেই ভেবেছেন এ দিয়ে আর কি সেবা হবে। কখনো কখনো আমাদেরও এমনটা মনে হলেও মনোবল হারাইনি। সবার মনোবল ও ভালো কাজের প্রতি স্বদিচ্ছায় আমরা এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি। এর ফলে বেড়ায় এখন আমাদের কর্মপরিধি ব্যাপক। এতিমখানা ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনাসহ নানা ধরণের সেবামূলক কাজ চলছে। এ পুরস্কার আমাদের কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দেবে।