শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বীরগঞ্জে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

বীরগঞ্জে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

Views

খায়রুন নাহার বহ্নি,বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ প্রখর রোদ গরম অনাবৃষ্টিতে ক্ষতি কাটিয়ে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের কৃষকেরা। তারা প্রতিবছর আগাম জাতের ধানের চাষাবাদ করে থাকেন। বৃষ্টি পানির অপেক্ষায় না থেকে সেচ পাম্পের পানি সেচ দিয়ে এই ধানের চাষ শেষ করে আগাম জাতের সবজি চাষাবাদ করে।
এ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি ও দেরিতে শীত পড়েছে এ বছর আগাম সবজি চাষে যথেষ্ট প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। যে সময় শীতকালীন আগাম সবজি ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে বিক্রির কথা, সে সময় সবজির আবাদের জন্য ক্ষেত প্রস্তুতির কাজ করছেন চাষিরা। ফলে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষকেরা লোকসানের পাশাপাশি শীতকালীন সবজি চাষের মৌসুম থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কৃষকরা জানান,উত্তরের দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বড় একটি অংশ সরবরাহ হয় চট্টগ্রাম,নোয়াখালী, সিলট, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। তবে এ বছর প্রচন্ড তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে এসব এলাকার ফসলের ক্ষেত। ফলে এখানকার সবজি উৎপাদন শুরু করতে দেরি হয়েছে। সহযোগিতার দাবিও জানিয়েছেন তারা। উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র ঘোষ। তিনি প্রতি বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করে চমক দেখান। তবে চলতি বছর তিনিও হতাশ।

নিরঞ্জন চন্দ্র ঘোষ বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর থেকে সবজি আবাদ করে লাভবান হয়েছি। এবছরও চার বিঘা জমিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে আগাম জাতের শীতকালীন সবজির চারা রোপণ করেছি। গত মাসে প্রচন্ড দাবদাহের কারণে দেরিতে ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা লাগিয়েছি। কিন্তু এ সবজি যখন বাজারে উঠবে, তখন ভালো দাম পাবো না। তিনি আরও বলেন,বর্ষার শেষদিকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের সবজির চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে বিক্রি করি। আমাদের এলাকায় প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষক আগাম জাতের বেগুন,ফুলকপি, বাঁধাকপি উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছে। এই এলাকার উৎপাদিত সবজি। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে সবজি। এই গ্রামের অন্যরাও বাঁধাকপি ও ফুলকপির বীজ বপন করেছেন।
অক্টোবর মাসের দিকে বৃষ্টিতে প্রথম দফার বীজতলা ও রোপণ করা চারা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য আবার নতুন করে সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন অনেকে। এতে মৌসুমের শুরুতে বাজার ধরতে না পারায় উৎপাদিত সবজির বাজারদর কম পাওয়ার শঙ্কায় তারা। এ জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি কৃষকদের।
উপজেলার মাকড়াই গ্রামের কৃষক মো: মিলন বলেন, এবছর ২ বিঘা জমিতে তীর বেগুন, আলু ও পেঁপে ক্ষেত পরিচর্চা করে আসছেন। এতে বীরগঞ্জ স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। নতুন করে শীতকালীন সবজি বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেগুন উৎপাদন ভালো হয়েছে। তুলনামূলক দামও ভালো পেয়েছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৯০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৭৫ হেক্টর জমিতে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ শরিফুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বীরগঞ্জ উপজেলার মাটি সবজি চাষের জন্য উপযোগী। লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বছরের সব সময় অর্থাৎ বার মাসেই লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা যায়। ফসল উৎপাদনে কৃষক যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন, সে জন্য কৃষি অফিস সর্বদা খোঁজ খবর রেখে পরামর্শ প্রদান করছে। সেইসাথে তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে চাষিদের বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Share This

COMMENTS