প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৪, ২০২৪, ৪:১৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ১৮, ২০২৪, ৩:১৮ অপরাহ্ণ
বাঘায় শুরু হয়েছে খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহের উৎসব
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় শুরু হয়েছে মিষ্টি খেজুর গুড় ও রস সংগ্রহের উৎসব। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ। শীত এগিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দিচ্ছে। রস থেকে তৈরী হচ্ছে গুড়। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ দুই-ই সু-মধুর। শুধু যে গুড়ই তৈরী হচ্ছে তাও নয়, এই শীতকে ঘিরে গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে শীতের পিঠাপুলি আর পায়েস খাওয়ার উৎসব।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। যাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার খেজুর বাগান রয়েছে। এ ছাড়া সড়কপথ, রেললাইনের ধার, পতিত জমি, জমির আইল ও বাড়ির আঙিনায় রয়েছে আরও লাধিক খেজুর গাছ। সম্প্রতি গুড়ের ভালো দাম দেখে বর্তমানে পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষকরাও এখন খেজুর বাগান তৈরী করছেন। এর ফলে চাঙ্গা হবে গ্রামীণ অর্থনীতি।
স্থানীয় লোকজন জানান, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৪০-৫০ টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারে। এ রকম হাজার-হাজার ব্যক্তি রয়েছে যারা শীত মৌসুমে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় কাটান। যারা খেজুর গাছ লাগায় তাদের আঞ্চলিক ভাষায় গাছি বলা হয়। মৌসুম ভিত্তিক এই পরিবার গুলো খেজুর গাছের ওপর নির্ভরশীল। একজন গাছি এক মৌসুমে অর্থ্যাৎ ১২০ দিনে ১টি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। খেজুর গাছ ফসলের কোনো ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচও করতে হয় না। ঝোপ-জঙ্গলে কোনো যত্ন ছাড়াই বড় হয়ে ওঠে খেজুর গাছ। শুধু মৌসুম এলেই নিয়মিত গাছ পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই রস দিয়ে তৈরী করা হয় সুস্বাদু গুড়।
অপর দিকে খেজুর গাছের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি করা হয়। পরিকল্পিত ভাবে খেজুর গাছ বৃদ্ধি করা হলে দেশে গুড়ের চাহিদা মেটানোর পরও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। বাঘার আমোদপুর গ্রামের গাছি জসিম উদ্দিন ও বেল্লাল হোসেন জানান, আমাদের নিজেস্ব খেজুর বাগান রয়েছে। তবে অত্র অঞ্চল আম প্রধান এলাকা হওয়ায় ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু খেজুর গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। লোকজন জানান, যাদের খেজুর গাছ নেই এ রকম অনেক মানুষ শীত মৌসুমে ৩ থেকে ৪ মাসের জন্য খেজুর গাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় চুক্তি নিয়ে রস সংগ্রহ করে থাকেন। এরপর শীত শেষে তারা শহরে গিয়ে বিভিন্ন কাজ-সহ রিকসা ও ভ্যান চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন।
এদিকে আড়ানী হামিদকুমড়া গ্রামের গৃহিণী কাজলী বেগমের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমার ২ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে। সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। শীত এলেই জামাই- মেয়ে, নাতি- নাতনি, ছেলেদের শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও আত্নীয়দের নিয়ে ২-১ বার খেজুর গুড়ের পিঠা-পায়েস উৎসবের আয়োজন করি। এ প্রথাটা আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী আমল থেকে চলে আসছে। তাই আমিও করি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজে ২০ টি খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিজেরা খাই। আবার গুড় বিক্রয় করে যে টাকা পাই তা সংসারে কাজে লাগাই।
বাঘার বারখাদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আর কয়েকদিন বাদেই একটু বেশি শীত শুরু হলে পুর্ণদমে রস সংগ্রহ করা হবে। তখন গ্রামে গ্রামে শীতের সন্ধ্যায় সাজো রস খাবে অনেকে। শহরগ্রামী লোকজন অনেক সময় এই টাটকা রস খেতে গ্রামে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে গুড় উঠেছে। তবে পরিপূর্ন শীত না নামায় এখনও পুরোদমে রস নামেনী। এদিক থেকে গুড়ের বাজার বর্তমানে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে কেনা-বেচা চলছে। তবে পুর্ণদমে শীত নামলে গুড়ের বাজার মুল্য কমে আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আমরা কৃষকদের মাঝে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া আখের পাতা ও ধানের খড় সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি, যা গুড় তৈরিতে সহজ হয়। তিনি বলেন, বাঘার মানুষ একমাত্র খেজুর গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে প্রায় ৭-৮ কোটি টাকা আয় করে থাকেন। তাঁর মতে, যদি কৃষকরা নিজ নিজ পতিত জমিতে খেজুর গাছ রোপন করেন, তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হবেন তাঁর।
Copyright © 2024 সংবাদ প্রতিক্ষণ. All rights reserved.