ভোলা প্রতিনিধি ; ভোলায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নানান বাহানায় প্রতিদিনই বাড়ছে সবজি,মাছ,আলু,তেল,চালসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ক্রেতারা বলছেন,সব কিছুর মৌজুদ রয়েছে প্রচুর, তার পরেও দাম আকাশ ছোয়া সিন্ডিকেটের কারসাজি সব কিছু ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে,বিক্রেতারা বলছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। সিন্ডিকেটের সাথে কৃষি,চাল ব্যবসায়ী ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাতের বিরুদ্ধেও জড়িত থাকা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
গত কাল বৃহস্পতিবার (১৪ নভেন্বর) সকালে ভোলার বিভিন্ন বাজারে, সবজি, মুদি ও চালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে,সবজি ও মাছ ছাড়া সব দোকান খোলেছেন ৯টার পরে, দোকানে সব পন্যের সরবরাহ রয়েছে প্রচুর পরিমানে,আড়তে তিল পরিমান জায়গা নাই, বিভিন্ন স্থানেও ব্যবসায়ীদের গুদামে পন্যে ভরপুর,পাইকার বা ব্যাপারীরা আসলে মালিক ঘরে নাই বলে পন্য বিক্রি না করে পাইকার ও ব্যপারীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২/৩ ঘন্টা পরে দোকান বন্ধ করে চলে যান মালিক, ম্যানেজার ও ডেলীভারী সদ্দার। সন্ধ্যার সাথে সাথে চালের সকল আড়ৎ বন্ধ হয়ে যায়। ২ দিনের ব্যবধানে ভোলার বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আলুর কেজি বিক্রি হয়-৮০ টাকা। আবারও ভোজ্যতেল-সোয়াবিন,কোয়ালিটি, পামওয়েল, ডালডা, চালের দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্যতেল সোয়াবিন-২০৫,কোয়ালিটির-২০০, পামওয়েলের-১৯০ টাকা। মসল্লা জাতীয় হলুদ ও মরিচের গুড়ার দাম ও বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। জিরা-১০০০,এলাচি-৬০০০,দাড়চিনি-১২০০,পিয়াজ-১১০,আদার-২০০,রসুনের কেজি-২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে বরবটি-১৬০,কাচাঁমরিচ-৩০০,কাকরোলের-১২০,পটল-৮০, মুলার-৬০,করল্লা-১০০,ঝিঙ্গার-৮০,টমেটোর-১৮০,গাঁজর-২৬০,পঞ্চমুখি-৬০,গাডিকচু-৮০,কচুর লতি-৮০,ভেন্ডি-৮০,পানিকচু প্রতি পিস-১০০ থেকে ১৫০,লাল শাক কেজি-৩০০,কলমির শাক-২০০, লাউর শাক-৪০০,লাউর পিস-১০০ থেকে ২০০,ধনেপাতা-৩০০,শসা-৬০,রেখা-৮০,পেপে-৬০, মিষ্টি কুমড়া-৬০,চালকুমড়া-৬০,পাতা কপি-১২০,ফুল কপি-১২০ টাকা দামে বিক্রি করছে।
মাছ প্রকার ভেদে ১৫০ থেকে ২০০ কেজিতে বেড়েছে। পুকুরে চাষ করা মাছসহ গরু, খাশি, সব প্রকার মুরগীর দাম ৩০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে।
প্রকারভেদে মোটা ও চিকন চাল ২৫ কেজির বস্তায় ১৫০ টাকা করে বেড়েছে। চাল ব্যবসায়ী আলমগীর চাকলাদার জানান, আমরা চাল আমদানী করে সামান্য লাভে বিক্রি করি। তাবে মিলারেরা বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায়। আড়তদার জামাল মুন্সি জানান,আলমগীর চাকলাদার একজন মিলার, তার কাছে কয়েক লাখ টন ধান ও চাল মৌজুদ রয়েছে, ভোলার চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করেন এবং প্রতিদিন ভোলা থেকে হাজার হাজার টন চাল বিভিন্ন জেরায় পাচার করেন। তার পিছনে রয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তারা কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে আর সাধারন মানুষ না খেয়ে ভোগান্তিতে পরে। চলতি বছরে খাদ্য বিভাগের ও এম এস ডিলার নিয়োগ নিয়েও তার বিরুদ্ধে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ করেন লাইসেন্স প্রত্যাসিরা। এবিষয়ে জানতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি, তিনি চরফ্যাশন উপজেলায় পরিদর্শনে গিয়েছেন বলে অফিসের কর্মচারিরা জানান। কোন মুদি ব্যবসায়ী এপ্রতিনিধির সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
সাধারণ ক্রেতা স্বপন, মাকছু, ফারুক জানান,বাজারের নিত্যপণ্যের দাম মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত ও নিন্মশ্রেনীর মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাচাঁবাজারসহ দিন দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে, ক্রয় করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। তারা আরো জানান, ভোলার নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করতো তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতো বলেও জানান ক্রেতারা।
সবজি বিক্রেতারা জানান, সব মালের দাম নিয়ন্ত্রণে বাইরে। বাজারে মালের কম সরবরাহ কারণে চাহিদা বেশি। যার কারণে দামও বেশি। আড়ত থেকে যে দামে কিনে আনি সে দামেও বিক্রি করি, তারপরও কাস্টমারের সঙ্গে আমাদের মনোমালিন্য হয়। তবে আমরা খুচরা বিক্রেতারা কোনো সিন্ডিকেট করি না। আড়ত থেকে কেনা দামের ওপর নির্ভর করে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে আড়তদাররা জানেন না বলে জানান।
সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অস্বীকার করে পরিবহন খরচ বৃদ্বি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর দোষ চাপিয়ে আড়তদারেরা বলছেন, বৃষ্টিতে উৎপাদিত অনেক সবজি নষ্ট হওয়ায় ভোলার বাজারে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা কাঁচামাল মাল কিনে এনে ভোলার বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তাদের দাবি, ভোলার বাজারে স্থানীয় পণ্যের জোগান বাড়লে সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও কমবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আড়তদার জানান, সব আড়তদার সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। শতাধীক কাচামালের আড়তদার রয়েছে,তারা রোটেশন করে ১দিন ১০ জনকে মাল আমদানি করতে অনুমতি দেন। সেই ১০ জনে মাল আমদানি করে ইচ্ছেমত দামে বিক্রি করে। যার র্দূভোগ সাধারন ক্রেতাদের উপরে পরে। আর আড়তদারেরা মোটা অংকের টাকা আয় করে। ভোক্তা অধিকার ও কৃষি বিপণন কর্মকর্তারা এদিকে নজর দেননা।
এবিষয়ে জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মোস্তফা সোহেল জানান,আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাজার মনিটরিং চলমান রয়েছে। এরপরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করেন তাহলে কৃষি বিপণন আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।