খায়রুন নাহার বহ্নি,বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ৮নং ভোগনগর ইউনিয়নের সিংড়া শালবন জাতীয় উদ্যান এবং প্রায় ৬টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তায় সেতু নির্মাণ করলেও তা কাজে আসছে না। নির্মানের কয়েক বছরের মধ্যে বন্যায় ভেঙ্গে যায় সেতু। দুই বছর অতিক্রম হওয়ার পরেও সেই ভেঙ্গে যাওয়া সেতুর মেরামতের আশায় দিন গুণছেন এলাকাবাসী। তবে, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সেতুর মেরামত কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ কারণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী সহ ৬ টি গ্রামের হাজারো মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, অনিয়মের মধ্য দিয়ে সেতু তৈরীর ফলেই নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই বন্যায় ভেঙ্গে গেছে সেতুটি। এরপর থেকেই সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী না হয়ে পড়ে, ফলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে যায়। এরপর বছরের পর বছর গেলেও সেতুটি সংস্কার বা পুনঃ নির্মানের ব্যবস্থা করেনি কেউ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির পাশে থাকা মাটি সরে গিয়ে মাঝ বরাবর গভীর গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে সেতুটির কাঠামো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে যাতায়াতের জন্য সেতুটি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সেতুর মূল অংশে চলাচল করতে পারছেন না তারা, ফলে বাধ্য হয়ে আশপাশের বাড়ির উঠানের ভিতর দিয়ে বা জমির মাঝ দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে পুকুর বা খালের পাশ দিয়ে প্রায় বিপজ্জনকভাবে চলাচল করতে হয়। সেতুর এই অবস্থা এলাকার মানুষজনের জন্য খুবই অস্বস্তিকর এবং বিপদজনক হয়ে উঠেছে।
চাউলিয়া গ্রামের মোহন্ত চন্দ্র রায় জানান, হাট-বাজার বা উপজেলা শহরে যাওয়ার জন্য বর্তমানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সময় এবং শক্তি দুটোই ব্যয় হচ্ছে, ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে বিশাল বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
সিংড়া গ্রামের প্রমিলা রানী বলেন, এটা আমাদের জন্য সত্যিই খুব কষ্টকর। বর্ষায় গর্তে পানি জমে যাতায়াত আরো কঠিন হয়ে ওঠে, এমনকি ভারী বৃষ্টি হলে গর্তে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, ফলে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসময় বিশেষ করে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধদের চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে, এবং তাঁরা গুরুতর ভোগান্তিতে পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজিজ মিয়া বলেন, প্রায় ২ বছর আগে বন্যার পানির জন্য সেতুটির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেতুটি ডেবে গিয়ে সড়কের সংযোগ অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পুনরায় সেতুটি ঠিক না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রায় ৬টি গ্রামের মানুষকে । ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা বেশির ভাগ কৃষক। তাই তাদের কৃষি কাজে সার, কীটনাশক, বীজ ডিজেল, সেচযন্ত্র ও নিত্য ব্যবহার্য নানা জিনিজপত্র এ পথেই আনা নেওয়া করতে হয়।
৮নং ভোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রাজিউর রহমান রাজু বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুল, কলেজে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ও জরুরী হাসপাতাল গামী রোগীদের কেউ। সেতুটি দ্রæত মেরামত করা হলে এলাকাবাসীর অনেক উপকার হবে এবং সিংড়া শালবন জাতীয় উদ্যান ভ্রমন করতে সহজ হবে। সেতুটি না থাকার কারণে সিংড়া শালবন জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে পর্যটন অনেক কমে গেছে।
এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জিবরীল আহাম্মেদ জানায়, সেতুর মেরামত সম্পর্কে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে এবং এটি দ্রæত বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। বরাদ্দ অনুমোদন হওয়ার পর শিগগিরই কাজ শুরু হবে।