শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা \ ভারত থেকে আমদানির পরও কমেনি ডিমের দাম, চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। বছর জুড়ে অস্থিতিশীল ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি ডিম আমদানি করা হলেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। অত্রাঞ্চলের প্রতিটি বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা। ডিমের আমদানি শুল্কহার কমলেও বাজারে ডিমের দরে তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। সরকার পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীদের প্রতি পিচ ডিমের মূল্য ১১ দশমিক ০১ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তারা বিক্রি করছেন ১২ দশমিক ৮০টাকা। সরকার খুচরা বাজারে প্রতিপিচ ডিমের মূল্য নির্ধারণ করেছেন ১১দশমিক ৮৬ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকা প্রতি পিস। আগে প্রতিপিচ ডিমে শুল্ক দিতে হত ১টাকা ৮৩ পয়সা আর বর্তমান দিতে হচ্ছে মাত্র ৭৭ পয়সা। ভারত থেকে প্রতি পিস ডিম কেনা হচ্ছে ৫ টাকা ৮০ পয়সা। শুল্কহার ৭৭ পয়সা এবং অন্যান্য খরচ ও লভ্যাংশ ১ টাকা ধরলেও প্রতিপিস ডিমের খরচ পড়ছে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা। কিন্তু বর্তমান খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি আছে প্রতি পিচ ১৩-১৪ টাকা। বাজারের ডিম ব্যবসায়ী মোসলেম আলী বলেন, আমরা যেভাবে ডিম কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি। সরকার ইতিমধ্যেই ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দিযয়েছেন পাইকারি বাজারে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরা বাজারে আমাদেরকে বিক্রি করার নির্দেশনা দিযয়েছেন ১১ টাকা ৮৬ পয়সা। কিন্তু আমরা ডিম কিনছি ১২ টাকা ৮০ পয়সা। সেখানে আমরা বর্তমান ১৩-১৪ টাকায় বিক্রি করছি। আমদানিকৃত ডিমের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোসলেম আলী বলেন, বাজারে আমদানিকৃত কোন ডিম আমরা পাই না। আমরা যেভাবে ডিম কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি। আমরা এখানকার স্থায়ী খামারীদের কাছ থেকে ডিম কিনে বিক্রয় করি। অপর ডিম ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ফার্মের মালিকরা যদি সরকারের নির্ধারণ করা রেটে ডিম আমাদেরকে দেয় আমরাও সরকারের নির্ধারিত রেটে ডিম বিক্রি করতে পারব। এক সপ্তাহ আগে আমরা প্রতি পিচ ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি করেছি। বর্তমান কমিয়ে তা ১৩-১৪ টাকা বিক্রি করছি। আসলে আমরা যেভাবে কিনছি তার উপর কিছু লাভ ধরে সেভাবেই বিক্রি করছি। এর কারণে প্রতিনিয়ত খরিদ্দারদের সাথে আমাদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। প্রশাসন আমাদের উপর নজরদারি না করে যদি ফার্মে ফার্মে অভিযান চালিযয়ে ভাউচার চেক এবং তদারকির ব্যবস্থা করেন তাহলে হয়তো ফার্মের মালিকরা সরকার নির্ধারত রেটে ডিম বিক্রি করবে। বাগআঁচড়া বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল হাই বলেন, ৫ই আগষ্টে সৈরাচারী সরকার পতনের পর থেকে ডিমের বাজার একেবারেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডিমের দাম। সাধারণ ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করে সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিমের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রনের দিকে নজর দিতে হবে। অপর ক্রেতা নাভারনের মশিউর রহমান বলেন, ভারত থেকে ডিম আমদানি করে লাভ কী? খুচরা দোকানগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাদামি রঙের ডিম ১৩-১৪ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। শার্শা বাজারের তাপস কুমার বলেন, ডিমের দোকানদাররা এখন আর বেশি ডিম দোকানে উঠাচ্ছে না। চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডিম ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বাজারে বাহিরের ক্ষুদ্র খামারীদের ডিম বিক্রি করতে দেওয়া হয় না। শুধু মাত্র আফিল এগ্রো ফার্মের ডিম বাজারে পাইকাররা বিক্রি করছে। বিধায় ডিমের দাম কমছে না। এছাড়া সিন্ডিকেটে ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে ডিমের বাজার চড়া। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চক্র দাম নির্ধারণ করে, যাতে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের ডিম কিনে আনা এবং বিক্রি করার মূল্য খতিয়ে দেখতে হবে এবং পাইকারি ও খুচরা বাজারে সমানতালে অভিযান পরিচালনা করতে হবে বলে এ ব্যবসায়ী মনে করেন। ভারত থেকে ডিম আমদানিকারকের প্রতিনিধি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত ডিমে শুল্কহার ছিল ৩১শতাংশ। সেই হিসেবে প্রতিপিস ডিমে ১ টাকা ৮০ পয়সা করে শুল্ককর দিতে হয়েছে সরকারকে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুল্কহার কমানো হয়েছে। শুল্কহার কমানোয় এখন সর্বসাকূল্যে ডিউটি দিতে হচ্ছে ১৩শতাংশ। এখন প্রতিপিস ডিমে শুল্ক কর দিতে হচ্ছে মাত্র ৭৭ পয়সা। এর আগে দেওয়া হতো ১ টাকা ৮৩ পয়সা। 'ভারত থেকে ডিম আমদানিতে সকল আমদানিকারকের অনুমতি দিলে ডিম আমদানি আরো বেশি হত এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসত বলে আমি মনে করছি। বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজিব নাজির বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সাড়ে ৭ টাকা দরে ভারত থেকে মুরগির ডিম আমদানি করা হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর পাঁচটি চালানে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি মুরগীর ডিম আমদানি করা হয়েছে।