প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২৯, ২০২৪, ৬:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৪, ২০২৪, ২:৩৬ অপরাহ্ণ
পটুয়াখালীতে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি।: কাজের চুক্তি ও বিল ছাড়ের সময় কমিশন নেয়া, বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেনের বিরুদ্ধে। ২০৩২ সালে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হবেন, তাই এখন থেকেই করছেন এসব অনিয়ম। এ কারণে এলজিইডির কাজ করতে অনীহা অনেক ঠিকাদারের। ক্ষমতার অপব্যবহার করায় তার অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বিব্রত বোধ করেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। তার কাছে ঠিকাদারদের সম্বন্ধে কথা বলতে ভয় পান অফিসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা, তারা সর্বদাই তটস্থ থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার বলেন, টাকার বিনিময়ে তিনি ঠিকাদারদের রেট কোড দেন। কাজ পেলে চুক্তির সময় প্রাক্কলিত মূল্যের শতকরা দুই টাকা তাকে নগদ, চেক বা তার দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে অগ্রিম দিতে হয়। এরপর নিয়ম মেনে কাজ শতভাগ সঠিক ভাবে করা হলেও বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি খুঁজে বের করে নানা অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করেন। তাকে খুশি করতে এজন্য ঠিকাদারদের গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। তাকে খুশি রেখে খারাপ মানের উপকরণ দিয়েও কাজ করা যায়। তিনি খুশি না থাকলে যত ভালো কাজ করা হোক না কেন তিনি খুঁত বের করেই ছাড়বেন। এখানেই শেষ নয়, কাজ শেষে বিল ছাড় করানোর জন্যও তাকে শতকরা এক থেকে দুই টাকা দিতে হয়। এ টাকা না দিলে ফাইলে সই করেন না তিনি। এতে বিপাকে পড়েন ঠিকাদারেরা। বিলের টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে তারা নতুন কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। ঘুষের টাকা চাওয়া এবং তাকে বিভিন্ন একাউন্টে টাকা দেয়ার প্রমাণ একাধিক ঠিকাদারদের কাছে রয়েছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন ঘুষের টাকা না পেয়ে গাফিলতি কারে ঠিকাদারদের বিল না দেয়ায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পটুয়াখালী-বরগুনা প্রজেক্টের ২৩ কোটি টাকা ফেরত যায়। এখন পর্যন্ত যার কোন সুরাহা তিনি করতে পারেননি। এদিকে কাজ শেষে বিলের টাকা না পেয়ে দপ্তরটিতে প্রতিনিয়ত ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে বিব্রত পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ। গত ২৫ জানুয়ারি তারিখে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সভায় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলীদের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগ করেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর।
তিনি প্রতিবেদককে বলেন, বিলের টাকা না পেয়ে অনেক ঠিকাদার আমার কাছে অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেনের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশী অভিযোগ আসে। তিনি চুক্তির সময় ২ পার্সেন্ট এবং বিলের সময় ২ পার্সেন্ট টাকা না দিলে ফাইল আটকে রাখেন। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে তবু অদৃশ্য ক্ষমতাবলে তিনি বহাল রয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফ হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো পুরোপুরি মিথ্যা। আমি পটুয়াখালী আসার পরে কাজের কোয়ালিটির ব্যাপারে একটু বেশিই চাপাচাপি করতেছি। এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা। আমাকে বদলি করার জন্য ঠিকাদারেরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে। বেশ কিছু কাজের মান খারাপ হওয়ায় বিল আটকে দিয়েছি কোন কোন ক্ষেত্র বিল কমিয়ে দিয়েছি তারা অগ্রিম বিল নিতে চাচ্ছে তা না দেওয়ায় ক্ষমতাশালী ঠিকাদাররা আমার প্রতি নাখোশ।
তিনি আরো বলেন, আমি কোন ঠিকাদারকে এডভান্স বিল ও সুযোগ সুবিধা দেয়নি, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করছি। চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়া না হওয়ার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। আমি যোগ্য হলে ওই পদে যাবো। আমার ইচ্ছে ছিল কোয়ালিটি কাজের মাধ্যমে পটুয়াখালীকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু এখানকার ঠিকাদাররা কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে রাজি নয়। তাই তারা আমার পেছনে লেগেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে পটুয়াখালী বরগুনা প্রকল্পের ফেরত যাওয়ার ২৩ কোটি টাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা চিন্তা করেছিলাম যতটা পরিমাণে কাজ আমরা করতে পারব সেটি আমরা করতে পারিনি তাই টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। কাজগুলোর শেষ পর্যায়ে বর্ষাসহ বিভিন্ন কারণে কাজগুলো আমরা কোয়ালিটি ফুল ভাবে করতে পারিনি এজন্য টাকা ফেরত দিয়েছি। আর টাকা ফেরত যাওয়ার বিষয়টি একটা নরমাল বিষয়। বিভিন্ন সময়ে টাকা ফেরত যায়। তবে এই বছর আবার আমরা টাকাগুলো পেয়ে যাচ্ছি, এজন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।#
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.