জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে ৪৮ জন ওএমএসের ডিলার রয়েছেন। উপজেলাগুলোতে ওএমএস কার্যক্রম বন্ধ বয়েছে। নগরে ৪৮ ডিলারের মধ্যে প্রতিদিন ২৫ জন ডিলারকে ২৫টি পয়েন্টে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। একজন ডিলারকে প্রতিদিন ১ টন চাল ও দেড় টন করে আটা দেওয়া হয়। ডিলারদের কাছে থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি ২৪ টাকা দামে ৫ কেজি আটা এবং ৩০ টাকা দামে ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, খাদ্যশস্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে গরিব ও অসচ্ছল মানুষের কাছে কম দামে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি করে সরকার। কিন্তু ১৫–২০ বছর ধরে ডিলার হিসেবে রয়েছেন একই ব্যক্তি। এছাড়া ওএমএস কেন্দ্রের চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি ডিলারশিপ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সব ওএমএস ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করছে। একইভাবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সব ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হচ্ছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ডিলার পরিবর্তন না হওয়ায় এই কর্মসূচিতে বেড়েছে অনিয়ম–দুর্নীতি। দলীয় বিবেচনায় অনেকে ডিলারশিপ নিয়ে সেটি অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছেন। ডিলারের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে প্রতিনিধি হিসেবে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করছেন অনেকে। গুদাম থেকে খাদ্যশস্যও সংগ্রহ করছেন প্রতিনিধিরা। কেন্দ্র ও গুদাম কোথাও দেখা মেলে না ডিলারদের। বিতরণের আগেই গরিবের এই চাল–আটা হরিলুটের অভিযোগও রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, আগের সকল ওএমএসের ডিলার বাতিল হচ্ছে। নতুন ওএমএস ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। নানা অনিয়ম ও শর্ত ভঙ্গের জন্য ডিলারদের শাস্তির ব্যবস্থা রেখে নতুন ওএমএস নীতিমালা জারি করা হয়েছে। ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার ওএমএস কমিটির সভা আছে। সভায় সিদ্ধান্ত হবে চট্টগ্রামে কতজন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। আগে নগরীতে ২৫টি পয়েন্টে (ডিলারদের) বাই রোটেশনে ওএমএসের চাল ও আটা দেওয়া হতো বলে জানান তিনি।
ওএমএস এখন চালু আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন ডিলার নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত আগের যারা আছেন তাদের দিয়ে ওএমএস চালু রাখা হবে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে সারা দেশে নতুন ডিলারশিপের মাধ্যমে ওএমএস চালু হবে।
৭ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান স্বাক্ষরে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) নীতিমালা ২০২৪ জারি করা হয়। এই নীতিমালা দেশের সকল বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। বাংলাদেশের যে কোনো, বিশেষত নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী ওএমএসের উপকারভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরী) মো. ফখরুল আলম বলেন, নতুন ওএমএস নীতিমালা জারি করেছে সরকার। আগের সকল ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে নতুন করে ৩৮ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হবে।
ওএমএস কর্মসূচি এখন শুধুমাত্র নগরীতে চালু আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক ডিলারকে এখন প্রতিদিন ১ টন চাল এবং দেড় টন আটা দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। উপজেলাগুলোতে এখন বন্ধ। শুধুমাত্র বন্যা কবলিত তিনটি উপজেলায় চালু আছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, নানা অনিয়ম ও শর্ত ভঙ্গের জন্য ডিলারদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে নতুন ওএমএস নীতিমালা ২০২৪ জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৫ সালের নীতিমালাটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অনিয়মের জন্য ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। নতুন নীতিমালায় ডিলারদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে লাইসেন্সের মেয়াদ। বাড়ানো হয়েছে ডিলারদের ফেরতযোগ্য জামানতের অর্থের পরিমাণ।
নতুন ওএমএস নীতিমালা ২০২৪ অনুযায়ী, ডিলার নিয়োগের সুপারিশের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার। সদস্য সচিব আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি (মেয়র অথবা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত) এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।