প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ৩:২১ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৯, ২০২৪, ২:৫৯ অপরাহ্ণ
বাঘায় ক্লাস রুমের চেয়ে শিক্ষক রুমে বেশি কলরব
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় গতকাল সকাল ১১ টায় প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত শাহ্দৌলা সরকারী কলেজে প্রবেশ করে দেখা যায়, শুনশান নিরা বতা। ছাত্র শিক্ষকের পদাচারণায় যেখানে মুখরিত থাকার কথা কলেজ ক্যাম্পাস, সেখানে শুধুই নিরাবতা। কিছুটা হতবাক হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ছাত্রদের ক্লাশ রুমের চাইতে শিক্ষকদের রুমে বেশি কলরব । কেন এই অবস্থা ! কৌতুহল নিয়ে জানতে গিয়ে অবাক করা তথ্য পাওয়া যায়।
যেখানে কলেজে আসার জন্য শিক্ষার্থীরা অধির আগ্রহে থাকতো, আজ সেখানে কলেজে আসতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অনিহা। এই কলেজে তিন হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে প্রায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ শিক্ষার্থী। অনুরুপ অবস্থা উপজেলার অন্যান্য কলেজে ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং বানিজ্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বর্তমানে ২৫ টি কলেজ, ৪৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৭৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও রয়েছে কারিগরী ও কৃষি ডিপ্লোমা সহ বেশ কিছু মাদ্রাসা। এর মধ্যে গত সরকার আমলে বাঘা শাহদৌলা কলেজ এবং আড়ানী মনোমহনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করণ করা হয়েছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় বাদে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একে বারেই কম ! স্থানীয় লোকজন বলছেন, যে প্রতিষ্ঠনে ১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে সেখানে বর্তমানে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫শ’ থেকে ৬শ’ জন। এ দিক থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। এমনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে ক্লাস ভিত্তিক নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক থাকলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত শাহদৌলা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আবুবক্কর সিদ্দিক অসুস্থ জনিত কারনে এক মাস ছুটিতে আছেন।এ কারনে তিনি কলেজে আসতে পারছেন না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একজন প্রভাষক জানান, অধ্যক্ষ কলেজে না আসায় শিক্ষার পরিবেশ অনেকটা বিঘ্নত হচ্ছে।
অপর দিকে দূর্ণীতির কারণে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে মীরগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম গত মাসের ২৩ তারিখ স্বেচ্ছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে এসে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। যার সত্যতা নিশ্চিত করেন নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম।
এ ছাড়াও মীরগঞ্জ কলেজে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে কলেজে আসতে পরছেন না ঐ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো: মাসুম আলী। অনুরুপ অবস্থা জোতরাঘোব মাধ্যমিক ও কলেজ শাখায়। ইতোমধ্যে ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম রবি’র বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাঁকে পদত্যাগ করানোর জন্যে মিছিল ও মানব বন্ধন করেছেন বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষক রবিউল ইসলাম ।
এ দিকে বাঘায় ৪৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গুঠি কয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে এমপিও ভুক্ত ৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান-গুলো স্কুল অনুমোদনের সময় কাগকে-কলমে সরকারি নিয়ম নীতি মানার দৃশ্য (প্রমান) দেখালেও এদের বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। সরকারি হিসাব মতে এই প্রতিষ্ঠান গুলোয় সর্বনিম্ন ১ হাজার শিক্ষার্থী থাকার নিয়ম থাকলেও কাগজে-কলমে রয়েছে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ জন। তবে বাস্তব চিত্র আরো ভিন্ন। যেখানে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ,তাদের শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ দেড় থেকে দু’শত জনের মধ্যে। এদের পড়া-লিখার মান এবং জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল একেবারেই সোচনীয়। এ ছাড়াও প্রতিদিন যে পরিমান শিক্ষার্থী স্কুলে যায়, টিফিন শেষে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে আসে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার স্থানীয় লোকজন। যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, সরকারি বিধি মোতাবেক যে পরিমান শিক্ষার্থী থাকার দরকার তার একটিও পূর্ণ করতে পারেনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। উপরোন্ত প্রতি বছর ফাইনাল পরিক্ষার সময় ৮০ ভাগ উপস্থিত দিখিয়ে ফর্মফিলাপ করার নিয়ম থাকলেও এসব নিয়েমের তোয়াক্কা করেন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এ জন্য তাদের মাসোয়ারা (অর্থ) গুনতে হয় বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে একজন স্কুল শিক্ষক জানান, প্রতি বছর ভর্তির সময় মফস্বল এলাকার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কলেজ গুলোতে শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে- এমন অবস্থা করে ফেলেছে, যার কারণে শিক্ষার্থীরা সঠিক সময় ও নিয়ম মাফিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে চায় না। এর ফলে দেখা যাচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীর চেয়ে শিকদের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য নীয়। এর আরো একটি প্রধান কারণ , প্রাইভেট ও কোচিং বানিজ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ফ.ম হাসান বলেন, চাকুরিরত কোন শিক্ষক কিংবা প্রভাষক প্রাইভেট-কোচিং করাতে পারবেন না। তবে যারা চাকরি না পেয়ে বেকার বসে রয়েছে, তাদের বিষয়টি ভিন্ন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে টিফিনের সময় শিক্ষার্থী ধরে রাখার জন্য সকল শিক্ষককে প্রায়স বলে থাকেন বলে দাবি করেন। অপর দিকে যে সকল প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষ নিয়ে জটিলতা রয়েছে, সেগুলো উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সাথে করে খুব শির্ঘই তিনি দেখবেন বলে জানান।
Copyright © 2024 সংবাদ প্রতিক্ষণ. All rights reserved.