পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে ; দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতিসহ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে মানব বন্ধন করেছে আজ বুধবার সকাল ১১ টায় পার্বতীপুর পৌরসভা চত্তরে পৌরসভার কর্মচারী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা। মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন, মাহাবুব রশিদ সংগ্রাম, শরফিুল ইসলাম বাবু, পৌরসভার কর্মচারী আফছানা খাতুন লিপ্টি, নবাব হোসেন প্রমুখ। বক্তারা উল্লেখ করেন, নিয়োগের নামে চাকুরী প্রার্থীদের নিকট হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাবেক মেয়র আমজাদ হোসেন। সম্প্রতি মন্ত্রনালয় কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেশব্যাপি বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন ও পৌর মেয়রদের অপসারণ করলে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে চাকুরীর জন্য টাকা দেয়া এসব মানুষের। এ ঘটনায় পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন গা ঢাকা দেয়ায় টাকা ফেরৎ পেতে সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভূক্তভোগীরা। এদিকে মেয়র না থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ বাস্তবায়নে প্রাণপন অপতৎপরতায় মেতেছেন এ বাণিজ্যের অন্যতম হোতা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম। জানা গেছে, ১৯৭২ সালে স্থাপিত প্রথম শ্রেণির পার্বতীপুর পৌরসভায় দীর্ঘদিন যাবত কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর, সহকারী কর আদায়কারী, কোষাধ্যক্ষ, স্বাস্থ্য সহকারী, নি¤œমান সহকারী কাম মূদ্রাক্ষরিক ও সার্ভেয়ার ৬টি পদ শুন্য থাকায় দায়িত্ব নেয়ার পর পরই নিয়োগ বাণিজ্য বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লাগেন সাবেক মেয়র। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছর ৫ মে নাম সর্বস্ব দুটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার একটির প্রতিনিধি সাবেক মেয়র আমজাদ হোসেন নিজেই। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সেসব পত্রিকা গায়েব করে দেয়া হয়। ফলে স্থানীয়রা ছাড়াও আগে থেকে পার্বতীপুর পৌরসভার অস্থায়ীভাবে কর্মরত কর্মচারীরা আবেদন প্রক্রিয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পৌর সভার সংশ্লিষ্টরা জানান, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও তা গোপন করে মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের পরিবারের লোকজন দিয়ে আবেদন পত্র দাখিল করেন। ৬পদের বিপরীতে আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে ২৭ চাকুরী প্রার্থী দেখানো হয়। এসব পদে পূর্ব থেকে নির্ধারিত ৬ প্রার্থীর মধ্যে পৌর মেয়রের ভাতিজা মাহমুদুল হাসান, নির্বাহী প্রকৌশলীর ছেলে নাফিস হাসান নিয়নসহ তিন জন এবং মেয়রের দুই শুভাকাঙ্খীর দুজন প্রার্থী রয়েছেন। আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে এসব প্রার্থীর প্রত্যেকের নিকট হতে ১৫-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ এলকাবাসীর মুখে মুখে। অনৈতিক পন্থায় নিয়োগ প্রদানের জন্য আগে থেকেই একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী সর্বোচ্চ অর্থ প্রদানকারী প্রার্থীদের নামের পাশে স্টার চিহ্ন দিতে দেখা যায়। এদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এক কাউন্সিলরকে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সার্ভেয়ার, স্বাস্থ্য সহকারী ও কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য তিন প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। মেয়র না থাকায় এখন আমাদের চাকুরীতো নাই সেই সাথে টাকারও হদিস পাচ্ছিনা। জীবনের সর্বোচ্চ সঞ্চয় হারিয়ে এখন মৃত্যু ছাড়া কোন পথ নেই আমাদের। এদিকে, সাবেক পৌর মেয়র আমজাদ হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে আবেদন করেছে। যোগ্যতা থাকলে তার চাকুরী হবে। কিন্ত একই পদে তার নিকট আত্মীয় অন্য দুই প্রার্থীর জন্য অর্থ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এর সদুত্তর দিতে পারেন নি। এ ব্যাপারে সোমবার দুপুরে কথা হয় পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জানে আলমের সাথে। নিয়োগের বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান। পার্বতীপুর পৌরসভার মাষ্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীবৃন্দ মানব বন্ধনে এ ৬ পদে অবৈধ নিয়োগ বাতিল সহ নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের অপসারনের দাবী জানান।