নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর নিয়ামতপুরে ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুডাঙার তালতলিতে তিনদিন ব্যাপী তাল পিঠার উৎসব শেষ হয়েছে। তাল পিঠা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। যেখানে তালের রস দিয়ে তৈরি রকমারি পিঠায় স্টলগুলোতে পসরা দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এ উৎসবকে ঘিরে সেখানে বসেছিল এক গ্রামীন মেলা। দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত ছিল মেলাপ্রাঙ্গন। সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্যের পাশাপাশি হরেক রকম পিঠার স্বাদ উপভোগ করেছেন দর্শনার্থীরা।
পিঠা বাঙ্গালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পিঠা-পুলির দেশীয় সংস্কৃতির পুরোনো ধারা হারিয়ে যেতে বসেছে। হারানো সেই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতেই এই আয়োজন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামে মাঠের মাঝ দিয়ে একেবেঁকে বয়ে গেছে পাকাসড়ক। এ সড়কের দুইপাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য তালগাছ। এ তালগাছের কারণে পর্যটকদের কাছে এখন ঐতিহ্যবাহী ঘুঘুডাঙা তালতলি হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত এ তাল সড়কের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন দর্শনার্থীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা তাল গাছের সৌন্দর্য ও পিঠার স্বাদ উপভোগ করেন।
স্থানীয় উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে তৃতীয় বারের মতো তালতলিতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) মেলা শুরু হয়ে চলে রোববার পর্যন্ত। তিনদিন ব্যাপী মেলায় পাঁকা তালের মিষ্টি রস, চালের কুড়া, লবন, গুড় ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় বাহারি সব পিঠা। এরমধ্যে তাল বড়া, জামাইপিঠা, হৃদয় হরণ, তালের শাহি মালাই, ফুলঝুরি, পাঠিসাপটা, খেজুর পিঠা, তালের জিলাপি, তাল রুটি, কান মুচুরি, পাকান, খির, পুলি, আমতা ও নাড়ুসহ প্রায় ৩০ ধরণের পিঠার পসরা দিয়ে সাজানো হয়েছে। লোভনীয় পিঠার স্বাদ নিতে ভীড় করেন রসনা বিলাশীরা।
মেলায় পিঠা ও বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকানসহ ৭০ টি দোকান অংশ নিয়েছিল। এরমধ্যে পিঠার দোকান ছিল তিনটি। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্যের পাশাপাশি হরেক রকম পিঠার স্বাদ উপভোগ করেন। দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠেছিল। গত বছরের তুলনায় এ বছর দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। তিন দিনের এ মেলায় প্রায় ২০ লাখ টাকা বেচাকেনা হয়েছে। গত বছর মেলায় প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছিল।
পিঠা মেলায় পিঠার দোকান দিয়েছেন উদ্যোক্তা ইসফাত জেরিন(মিনা)। তিনি বলেন, প্রায় শতাধিক ধরণের পিঠা দিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। প্রতিটি পিঠা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পিস। তালের পিঠাকে উজ্জিবিত করতে তালের রস দিয়ে পিঠাগুলো তৈরি করা হয়েছে। এবারের আর্কষণ ছিল তালের রস দিয়ে মিষ্টি তৈরি। বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও ভাল সাড়া পেয়েছি। গত তিন দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো শুধু পিঠা বিক্রি হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলার সাজ্জাদুল ইসলাম। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানি চাকরি করেন। থাকেন জেলার মহাদেবপুর উপজেলায়। তিনি বলেন- ইন্টারনেটে ঘুঘুডাঙ্গার তাল গাছ নিয়ে দেখেছি। মেলা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছি। খুবই সুন্দর মনে হয়েছে। বিশেষ করে সারি সারি তাল গাছ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এছাড়া তাল পিঠার স্বাদ উপভোগ করেছি। বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরি করা হয়েছে। মেলায় না আসলে দেখতে পেতাম না।
নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন- নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৬ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে ঘুঘুডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তালবীজ রোপন করেছিলাম। ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে এবং তাল গাছের ঐতিহ্য ধরে রাখতে রোপন করা হয়েছিল। সেই তালবীজ বড় হয়ে পুর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হয়েছে। গাছে তাল ধরছে। সেই তালের রস দিয়ে পিঠা তৈরি হচ্ছে। সবাইকে তালবীজ রোপনে আহ্বান জানান মন্ত্রী।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.