সোমবার- ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডোমারে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষনের আসামী ধরাছোঁয়ার বাইরে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী পরিবারসহ এলাকাবাসীর

ডোমারে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষনের আসামী ধরাছোঁয়ার বাইরে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী পরিবারসহ এলাকাবাসীর

 রবিউল  হক  রতন , ডোমার (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর ডোমারে রাতের অন্ধকারে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীকে বাড়ির পিছন থেকে তুলে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে হরেন্দ্র নাথ রায় (৩০) ভুক্তভোগী পরিবার থানায় মামলা দেওয়ার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন।

উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামে গত ৯মে সোমবার সন্ধ্যায় ধর্ষনের ঘটনাটি ঘটে।
এবিষয়ে ভূক্তভোগী ছাত্রীর বাবা গত ১১মে “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী/০৩ এর ৯(১) ধারায় ডোমার থানায় একটি মামলা নং ০৫ তারিখ ১১মে ২০২২ইং দায়ের করেন। উক্ত ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামী মৃত সুধীর চন্দ্র রায়ের পালিত পুত্র নরেন্দ্র নাথ রায় (৩০) তিনি পেশায় একজন ডিম চটপটির ব্যবসায়ী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাবা পেশায় একজন রিকশা চালক, সংসারে অভাব অনটনের জন্য তিনি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার মা ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন একটি প্রাইভেট ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে কাজ করেন। গত ৯ মে বিকালে ১১ বছর বয়সী নাবালিকা মেয়েটিকে বাসায় তার দাদা দাদীর কাছে রেখে তার মা কর্মস্থলে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওইদিন আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে মেয়েটি ঘর থেকে বের হয়ে দরজা লাগানোর উদ্দেশ্য গেলে সেখানে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা হরেন্দ্র নাথ রায় অতর্কিতভাবে মেয়েটির কাছে এসে তার মুখ চেপে ধরে বাড়ীর সংলগ্ন উত্তরে বাঁশঝাড়ে নিয়ে গিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। নাবালিকা মেয়েটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করার চেষ্টা করলে নরেন্দ্র মেয়েটির মুখ চেপে ধরে।ধ্বস্তাধস্তির একপর্যায়ে মূখ হতে হাতটি সরিয়ে চিৎকার করতে থাকলে হরেন্দ্র নাথ মেয়েটিকে রেখে পালিয়ে যায়। পরে মেয়েটির আত্ন চিৎকার শুনে পরিবারের লোকজন দুলাল হোসেন (৬৫) আমিনা বেগম (৫৮) এবং আনছার আলী (২৫) মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং ঘটনার বিষয়ে অবগত করার পরে সে শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তারা তাৎক্ষণিকভাবে মেয়েটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।সেখানে মেয়টির অবস্থা আশংকা জনক এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটিকে নীলফামারী জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে মেয়েটি গত ১২মে থেকে ১৫মে পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এবিষয়ে মেয়েটির বাবা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমি থানায় মামলা করার পর গ্রাম পুলিশ দুলাল আমাকে হুমকি স্বরূপ বলে ঘটনাটা বেশী বাড়াবাড়ি না করে মিমাংসায় আসেন, আমরা ছেলের কাছ থেকে আপনাকে টাকা নিয়ে দেবো। এরপর  ধর্ষক নরেন্দ্র নাথের চাচাত ভাই মনোরঞ্জনও আমাদের হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের কথা না শুনলে তোমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিব।তিনি আরো বলেন, আমরা ধর্ষকের বিচার চেয়েছি এটা কি আমরা অপরাধ করে ফেলেছি? এই ঘটনার সাথে আরো যারা যারা জড়িত রয়েছে আমি সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

এবিষয়ে মেয়েটির মা, চাচা ও চাচি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন , অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আমরা মেয়ের কান্নার শব্দ শুনে বাঁশঝাড়ের দিকে এগিয়ে গেলে ততক্ষনে নরেন্দ্র  পালিয়ে যায়। মেয়ের অবস্থা গুরুতর দেখে তৎক্ষনাৎ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক আবু সাঈদ মেয়ের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত নীলফামারী জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। হাসপাতালে ৩দিন চিকিৎসার পর মেয়েটির শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। তারা আরও বলেন, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহন করার সময় আমাদের ইউপি সদস্য মিন্টু মেম্বার হুমকি দিয়ে বলেন, ব্যাপারটা নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করেন না। তা নাহলে পরে তোমাদেরই সমস্যা হবে। গ্রামপুলিশ দুলাল বলেন, বেশী বাড়াবাড়ি না করে মিমাংসায় যান। আমরা ছেলে পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছি।

ধর্ষন মামলার অভিযুক্ত আসামী হরেন্দ্র নাথের স্ত্রী আলো (২০) বলেন, ধর্ষনের ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা। আমার স্বামী তাদের কাছে ধার বাবদ ৬০০ টাকা পেতো, সেই টাকা আনতে আমার স্বামী তাদের বাড়ি যায়। আমার স্বামী ৫-৬ দিন থেকে বাড়িতে নাই আর কোথায় গেছে আমরা সে ব্যাপারে কেউ কিছু জানিনা। ২ ছেলে নিয়ে আমাদের পরিবারের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই।

হরেন্দ্র নাথের প্রতিবেশী মনোরঞ্জন রায় জানান, আমাদের ওয়ার্ডের মিন্টু মেম্বার ঘটনা ঘটার পর সেই রাতেই হরেন্দ্রের কাছে কিছু টাকা নিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছে।

মটুকপুর সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি ঈদের ছুটি চলাকালীন সময়ে ঘটেছে। স্কুল খুলে বাচ্চাটিকে ক্লাসে না পাওয়ায় আমরা খোঁজ নিয়ে ধর্ষনের ব্যাপারটি জানতে পারি। সে আমাদের স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী। আমরা শিক্ষকরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অপরদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিন্টু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহকে ভিত্তিহীন মন্তব্য করে বলেন, মেয়ের চাচা ঢাকা থেকে মোবাইলে আমাকে দুর্ঘটনার সংবাদটি জানালে প্রথমে আমি অভিযুক্ত আসামী হরেন্দ্র নাথের বাড়িতে যাই। আমি তার কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে ঘটনা টি সম্পুর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যে। এরপর আমি ওই ধর্ষিতা মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে মেয়েটির অবস্থা দেখে দ্রুত মেডিকেলে পাঠাই।তিনি আরও বলেন, ঘটনা আমি তাৎক্ষণিকভাবে আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি ডোমার থানায় যোগাযোগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ আসে, তাদের নিয়ে আবারো হরেন্দ্র নাথের বাড়িতে গেলে খোঁজাখুঁজির পর হরেন্দ্র নাথকে আর পাওয়া

এবিষয়ে নীলফামারী জেলা সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ জাকিয়া জেনী জানায়, মেয়েটির শরীরে ধর্ষনের কিছুটা আলামত পাওয়া গিয়েছে।

মামলার ব্যাপারে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলা রেকর্ডের পর থেকে আমরা আসামীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। আসামী আত্মগোপনে রয়েছে। আমরা গ্রেপ্তারের জন্য ডিজিটালি ও ম্যানুয়ালি সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে অচিরেই আমাদের হাতে সে ধরা পড়বে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

৮৩ বার ভিউ হয়েছে
0Shares