আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর) ॥ দিনাজপুরের বিরলে প্রতিবেশির পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলন। স্থানীয় জনতা বিএনপি’র ওই নেতাসহ ৩ জনকে আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। বিরল পৌরসভার মহেশপুর মোড়ে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
পুলিশ সংবাদ পেয়ে সেনাবাহীনির সহায়তায় বিএনপি’র নেতা মিলনসহ আটককৃতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। তাদের ব্যবহৃত ৩ টি মোটর সাইকেলের মধ্যে একটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দিলেও ভাংচুর করা দুইটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে আহতরা হলেন- উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ এর ছেলে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলন (৪৫), বিরল ইউনিয়নের পুড়িয়া গ্রামের মৃত শাহের মোহাম্মদ এর ছেলে বাছেদুর রহমান (৪২), জগতপুর গ্রামের লোকমান আলী এর ছেলে ফারুক হোসেন (৩০) ও জগতপুর গ্রামের মাহাজনপাড়ার আঃ হাকিম ওরফে হাকু মাষ্টার এর ছেলে রুহুল আমীন (৪৫) বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় বালাইনাশক ব্যবসায়ী মাহাবুব আলম বাদী হয়ে বিএনপি’র নেতা মিলনসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে বিরল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছে।
এজাহারে জানান, গত ২৪ আগস্ট মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫ টায় উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলনসহ ৮ জনের একটি দল ৩ টি মোটর সাইকেলযোগে মহেশপুর মোড়ে গিয়ে বালাইনাশক ব্যবসায়ী উত্তর রবিপুর গ্রামের আব্দুল মালেক এর ছেলে মাহাবুর আলমকে দোকানে দেখতে পেয়ে অতর্কিকতভাবে মারপিট শুরু করে বিবস্ত্র করে। দোকানের ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ার থেকে নগদ ৪ লাখ টাকা ও ১ টি স্যামসাং স্মার্ট মোবাইল, ১ টি নোকিয়া মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় জনতা উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলন, রুহুল আমীন ও বাছেদুর রহমান নামের ৩ জনকে আটক করে উত্তম মধ্যম দিয়ে দোকান ঘরে আটকে রাখে। তাদের ব্যবহৃত ৩ টি মোটর সাইকেল রেখে অন্যরা পালিয়ে যায়। এতে বালাইনাশক ব্যবসায়ী মাহবুব আলম আহত হলে স্থানীয় জনতা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
বিরল থানার পুলিশ সংবাদ পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে আহত রুহুল আমীন ও বাছেদুর রহমানকে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। উত্তেজিত জনতার হাতে অবরুদ্ধ উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানকে পুলিশ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে রাত ৯ টার দিকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় উত্তেজিত জনতার হাতে অবরুদ্ধ উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের ব্যবহৃত ৩ টি মোটর সাইকেল এর মধ্যে ২ টি উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। ১ টি মোটরসাইকেল উত্তেজিত জনতা অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়েছে।
উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলন এর সাথে হাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার প্রতিবেশি ভাই আব্দুল ওহাব এর নিকট জমি বিক্রির জন্য মাহাবুব ৬০ হাজার টাকা ও পরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নেয়। যার হ্যন্ডনোট ও চেক দিয়েছে মাহবুব। জমি রেজিষ্ট্রি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে দিবো দিচ্ছি বলে প্রায় ৪ মাস ধরে টালবাহানা করে আসছে। আমি বিষয়টি সমাধানের জন্যে মাহাবুরকে কল দিলে সে দেখা করবে বলে টালবাহানা করে কালক্ষেপন করতে থাকে। সর্বশেষ ২ দিন পূর্বে আবার ফোনে কথা হলে তখন সে জানায় ভাই আমারও টাকাটা অনেকে খেয়ে ফেলেছে। বসতে হবে আপনার মাধ্যমে সমাধান করবো মঙ্গলবার। তার কথায় আমি মঙ্গলবার বিকেলে মাহাবুব এর দোকানে গিয়ে দেখি সে নাই। মোড়ের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করায় পার্শ্ববর্তী মোস্তাফিজুরের দোকানে আছে জানালে আমি তার কাছে যাই। সে পূর্ব পরিচিত না হওয়ায় আমি তাকে কে মাহাবুব বলে জানতে চাইলে সে বসে থেকে আমাকে জানায় আমি মাহাবুব। আমি মিলন বলতেই সে আমার টি শার্টের কলার টেনে ধরে। এ সময় আমার সাথে থাকা লোকজন তার এ ধরণের ব্যবহার কেন জানতে চাইলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার লোকজন আমাদের ঘিরে এলোপাথারী মারপিট শুরু করে অপপ্রচার শুরু করে। সে সময় আমার পকেটে থাকা নগদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং আমাদের একটি বাজাজ ডিসকোভার মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে ফেলে এবং একটি বাজাজ পালসার ও একটি হিরো হোন্ডা ডিলাক্স মোটরসাইকেল ভাংচুর করে আমাদের ৩ জনকে মারপিট করে আটক করে রাখে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম মাওলা শাহ্ বলেন, এক পক্ষ এজাহার দিয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলনসহ ৩ জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তাদের ব্যবহৃত ২ টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আরেকটি মোটর সাইকেল জ্বালিয়ে দিয়েছে জনতা।