তেঁতুলিয়া পঞ্চগড় প্রতিনিধি: তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে পুর্ব শত্রুতার জেরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তেঁতুলিয়া মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পাগলীডাঙ্গী গ্রামের সামসুদ্দোহার ছেলে কুদরত ই খুদা মিলন (৪২) কে প্রধান আসামী করে ১৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩শ আসামী করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ চা দোকানী ওবায়দুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
সংঘর্ষ চলাকালিন ঘটনাস্থল ৭ জনকে আটক করেন পুলিশ-বিজিবি। মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলায় অন্যন আসামিরা হলেন, হাওয়াজোত গ্রামের কসিম উদ্দিনের ছেলে আইয়ুব আলী (৫৫) একই গ্রামের আশরাফুলের ছেলে মো. হাসান (২৭) ও হিমু (৪০), আঃ সামাদের ছেলে মাসুম(২৮) দগরবাড়ি গ্রামের আনসার আলীর ছেলে জিয়ারুল(৩৫), ফুটবাড়ী এলাকার জবেদ আলীর ছেলে রুস্তম(৩৩) একই এলাকার মৃত আজগর আলীর ছেলে আহসান হাবিব(৩৫) দক্ষিণ কাশিমগঞ্জের সাইদুল হকের ছেলে আঃ রহমান(৩০) দরগাসিং এলাকার জাকের হোসেনের ছেলে আনিছুর রহমান(৩০) হাকিমপুর এলাকার ইউসুফ আলীর ছেলে পাভেল হোসেন (১৯) হাওয়াজোত গ্রামের মৃত বালু মোহাম্মদের ছেলে শুকরু(৫০), একই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে আকাশ(২৩) সাহাবার ছেলে তরিকুল ইসলাম(৩৫) ও আশরাফুলের ছেলে হৃদয়(২৯) নামীয়। এছাড়া আরও আজ্ঞাতনাম প্রায় সাড়ে ৩শ।
মামলার বাদী সিপাইপাড়া বাজারে চায়ের হোটেলের মালিক ওবায়দুল হক জানান, সোমবার (১৬ আগস্ট) সকালে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুদরত ই খুদা মিলন ভাড়াটিয়া লোক এনে এই সংঘর্ষ সৃষ্টি করেন। সেসব ভাড়াটে সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সিপাইপাড়া বাজারে এসে হামলা চালিয়ে এসে আমার চায়ের হোটেল ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে আমার তিন লক্ষাধিক টাকার মতো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তাই সুবিচার চেয়ে মিলন চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে ১৫ জনসহ ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতানামা আসামী করে মামলা করেছি।
এ ঘটনায় বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সোহরাব আলী (৩৬), আরিফ হোসেন (২৩), হিমেল (৪৯), জাফর আলী (৪৫), আইয়ূব আলী, তিরনইহাট ইউনিয়নের আশিক (২৮), আজিজুল (৪৫), কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকার ফরিদুল ইসলাম (৩২)সহ ১৫জন আহত হন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সামান্য আহত হওয়া ব্যক্তিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা পনের বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় মিলন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় এ ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। অন্যায়ভাবে মানুষের জমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দখল, চাকরি ও মানুষের জমি আরেকজনকে দখল করে দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতে তার দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করে। তার বিরুদ্ধে কথা বলায় মাদক মামলা সহ নানা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করেছেন। অনেকে তার রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই কুদরত ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে স্থানীয় জমি দখল, সিন্ডিকেট, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে বিচার ও চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, জুতা মিছিল করে আসছিলেন ভুক্তভোগী অনেক পরিবার।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সুজয় কুমার রায় বলেন, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে সিপাইপাড়া বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় ওবায়দুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনকে প্রধান আসামী করে ১৫জনকে উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও আসামী করা হয়েছে ৩/৩৫০ জনকে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করি। তাদেরকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।