শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

১৫ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাচাঁতে পারলাম না স্বামীকে

১৫ব্যাগ রক্ত দিয়েও বাচাঁতে পারলাম না স্বামীকে

৪৪ Views

সঞ্জয় ব্যানার্জী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি। ১মাস ২০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত মৃৃত্যুর সাথে হার মানলেন বাবুল মৃধা (৪৭)। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৯জুলাই এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলিতে ধুকে ধুকে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত বাবুল মৃধা পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী শানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী গ্রামের বাড়ী মফিজুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, সংসারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য ্িবগত ২৫ বছর আগে ঢাকায় গিয়েছিল। তখন তিনি বিবাহ করেন নি। তিনি প্রথমে রিক্সা ভাড়া নিয়ে মানুষ টানতো , পরে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো। তার স্ত্রীর নাম সিমা বেগম, দুই ছেলে বড় ছেলের নাম আবু তালেব (১৭) ও ছোট ছেলে মাহিমের বয়স মাত্র ২ বছর। মা হনুফা বেগমসহ পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল ৫জন। তার পবিরবারটি কদমতলী থানায় এরিয়া বসবাস করতেন।
বাবুল মৃধার বড় ছেলে আবু তালেব যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া কলেজের ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষে একাদশ শ্রেনিতে মানবিক শাখায় অধ্যায়ন করছিল। প্রথম দিক থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয় ছিল আবু তালেব। দিনটি ছিল ১৯জুলাই । যখন বাসা থেকে আন্দোলনে নামলো সন্ধ্যায় আবু তালেব বাসায় না ফেরায় বাসার লোকজন উদ্বিগ্ন ছিল। বাবুল মৃধা ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে বাসায় ফিরলে জানতে পারে তার ছেলে বাসায় আসেনি। তাৎক্ষনিক ছেলের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে । খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে যখন লাকি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যায় তখণ রাত সাড়ে ৮টা। কোথা থেকে যেন বাবুল মৃধার শরীরের বাম পাশের হাড়ের দিক দিয়ে একটি গুলি পেটে ঢুকে যায়। সাথে সাথে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। উপস্থিত ছাত্র জনতা তাৎক্ষনিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল নিয়ে যায়। গুরুত্বর বাবুল মৃধার মোবাইল দিয়ে বাসায় ফোন দেয় ওই রাতেই বাবুল মৃধাকে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। তখন তার শরীরে ১৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসায় তার ব্যায় হয়েছিল দেড় লক্ষ টাকা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে প্রায় ২৮দিন।পরে পিলখানা হাসপাতালে ৪দিন, সিএমএইচ ১৮দিন অবশেষে ১০সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন বাবুল মৃধা।
নিহত বাবুল মৃধার স্ত্রী সিমা বেগম জানান, বিবাহের পর পরই ঢাকা গিয়ে ছিলাম স্বামীর সাথে। আমার স্বামী সহজ সরল প্রকৃতির লোক। দুই ছেলে ও শ্বাশুড়িকে নিয়ে ৫জনার সংসার ভালোই চলছিল। মনে বড় আশা ছেলেকে মানুষ করমু , চাকরী করবে, শ্বাশুরী বয়স্ক মানুষ এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিকে হারিয়ে সংসার এখন অচল। শ্বাশুরী মাকে মনে হয় বেশি দিন বাচাতে পারমু না তার ছেলের জন্য সারা দিন কান্না কাটি করে। ছেলেটারে বলেছিলাম তুই আন্দোলনে নামলে আমরা তোর জন্য চিন্তা করি । কতই না পোলা পান পুলিশে মারতেছে । আমার স্বামীরে শেখ হাসিনার পুলিশে কেন মারল কে এখন সংসার চালাবে । আমার ছেলেকে কে পড়াবে আমার ছেলেকে কেউ চাকুরী দিবে এ কথা বলার সাথে সাথে সিমা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন্ ।
নিহত বাবুল মৃধার মা হনুফা বেগম (৬৮) জানান, আমার সংসার চালানো এক মাত্র পোলাডারে কেন মারল, ওর দোষ কি, কে আমার মুুখে ভাত দিবে, কে ওষুধ কিনে দিবে বলতে বলতে গলার স্বর স্তদ্ধ হয়ে গেল আর কথা বলতে পারলো ন্ া।
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ১০সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটার সময় বিএনপির নেতা কর্মীদের উপস্থিতিতে প্রথম জানাযা হয়। পড়ে দশমিনা উপজেলার বেতাগী শানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী গ্রামের বাড়ীতে রাত ৯টা লাশ নিয়ে আসলে এক হ্নদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ওই রাতেই কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত বাবূল মৃধার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল (বিএনপি’র) জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য হাসান মামুন শোক জানিয়েছেন।
এব্যাপারে দশমিনা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোসা. নাফিসা নাজ নীরা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দশমিনায় নিহত পাঁচ ও আহত একজন। কিন্তু নিহত পাঁচ জনের মধ্যে তিনজনকে স্ব স্ব এলাকায় এবং দুইজনকে ঢাকায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসন নিহত তিন পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। আর ঢাকায় দাফন সম্পন্ন দুই নিহতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে তাদেরকেও সাহায্যের আওতায় আনা হবে।

Share This

COMMENTS