কলমাকান্দা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই চলছে ৬০টি করাতকল। এসব করাতকলে সাবাড় হচ্ছে বনজ, ফলজসহ নানা প্রজাতির গাছ। অভিযোগ রয়েছে বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছেন ওইসব করাত কল মালিকদের কাছ থেকে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। শুধু তাই নয় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠা এসব করাতকলের শব্দদূষণের ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দা উপজেলায় প্রায় ৭২টি করাত কল রয়েছে। তারমধ্যে ১২টি স’মিলের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে। স'মিল (লাইসেন্স) বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী কোনো স'মিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন না। আর লাইসেন্স নেয়ার পর থেকে তা প্রতিবছর নবায়ন করার কথা থাকলেও তা মানছেন না মিল মালিকরা। তবে বন বিভাগের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, উপজেলায় মোট ৭২টি করাতকল আছে। তারমধ্যে ১২টির লাইসেন্স আছে। তাদের মধ্যে সম্প্রতি কয়েকজন লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন স'মিল (করাত কল) ঘুরে দেখা গেছে, মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলেও মিল মালিকরা তা মানছেন না। অনেকেই ১০-১৫ বছর যাবত অনুমোদন ছাড়াই চালাচ্ছেন করাত কল । করাত কলের চত্বরে মজুত রাখছেন বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে কাঠ কাটার কাজ। এসময় সরকারের অনুমোদনহীন এসব অবৈধ স'মিলগুলো বন্ধ করার কোনও উদ্যোগও চোখে পরেনি। তাছাড়া নাজিরপুর পল্লী জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে সাতটি করাত কলসহ আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অবৈধভাবে অন্তত ২০টি করাত কল চলছে।
এছাড়াও সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লেংগুরা, খারনৈ ও রংছাতি সীমান্ত এলাকায় প্রায় পনেরোটি করাত কল চালু আছে। নাজিরপুর পল্লী জাগরণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সোহাগ মিয়া বলেন, দিনরাত করাতকলের শব্দের কারণে ক্লাস করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত করাতগুলো সরিয়ে নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক লেংগুরা এলাকার এক স'মিলের মালিক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স'মিল চলছে। অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি এখনও অনুমোদন পাইনি। বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে মিল চালাচ্ছি।
কাঠ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, সহিদ, রুক্কু মিয়াসহ অনেকে বলেন, ‘আমরা কাঠের ব্যবসা করি। এই ব্যবসা করে আমাদের সংসারের খরচ চলে। মিলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমরা দেখি মাঝেমধ্যে বন বিভাগের লোকজন এসে মিল থেকে টাকা নিয়ে যায়। এতে করে মিল মালিকদের আর কোন ঝামেলা হয় না।
তবে সচেতন মহল মনে করেন, এভাবে সরকারের অনুমোদন বিহীন করাত কল (স'মিল) চলায় একদিকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, বন উজাড় হচ্ছে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব। এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া জরুরি।
বন বিভাগের নেত্রকোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম মিল-মালিকদের থেকে মাসোহারা নেয়ার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ স'মিলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.