ইয়ানূর রহমান : যশোরের প্রখ্যাত সাংবাদিক দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের আজ ৩০ আগস্ট ২৬ তম শাহাদত বার্ষিকী। সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুল খুন হয়েছেন দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। অথচ চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার আজও হলো না। কেবল বিচার হয়নি বললে ভুল হবে, গত কয়েক বছর ধরে মামলাটির বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে।
দীর্ঘদিনে বিচার না হওয়ায় হতাশ সাইফুল আলম মুকুলের স্বজন ও সহকর্মীরা। বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন বাদী হাফিজা আক্তার শিরিন।
১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাতে রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল রিকশাযোগে শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে দুর্বৃত্তদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরেরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন অজ্ঞাত
পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলাল উদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। এই চার্জশিট নিয়ে শুরু হয় নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। এক পর্যায়ে মামলার
বিচারিক কার্যক্রম থেমে যায় আইনি জটিলতার কারণে।
প্রায় দুই যুগে বিচার না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন দেশজুড়ে আলোচিত এই মামলার বাদী নিহত মুকুলের সহধর্মিণী হাফিজা আক্তার শিরিন। তিনি হতাশায় পড়ে মামলার আদ্যপান্ত ভুলতে বসেছেন। মামলার প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি কান্নাকাটি শুরু করেন। এখন আর তিনি এই মামলা নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে চান না।
এ মামলায় একজন আসামির হাইকোর্টে স্থগিত চেয়ে করা রিটের চূড়ান্ত আদেশ না আসায় যশোর স্পেশাল জেলা জজ আদালতে বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে রয়েছে কয়েক বছর। নিহতের স্বজন ও যশোরের সাংবাদিকরা অবিলম্বে মুকুল হত্যার বিচার শেষ করে আসামিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১০ সালে সাইফুল আলম মুকুলহত্যা মামলায় একজন আসামির অংশ বাদ রেখে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। রিট হওয়ার পর হাইকোর্ট থেকে চূড়ান্ত আদেশ না আসায় এ পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। হাইকোর্ট থেকে আদেশ আসলেই দ্রুত মুকুল হত্যা মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন আদালত সংশ্লিষ্টরা।
ছয় বছর পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর আরেক তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এএসপি মওলা বক্স আরও দুইজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন। ২০০৬ সালের ১৫ জুন যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মুকুল হত্যা মামলার চার্জগঠন করা হয়। ওইসময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলা থেকে তৎকালীন মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম ও রূপম নামে দুইজনকে অব্যাহতি দেন আদালত। ২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আরেক সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। উচ্চ আদালতে যাওয়ায় ফের মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছরেও হাইকোর্টের কোনো আদেশ যশোরের আদালতে এসে পৌঁছেনি। এসব
কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।
সাংবাদিক আরএম সাইফুল আলম মুকুলের ২৬ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে প্রেসক্লাব, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর ও যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালোব্যাজ ধারণ, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। সকাল ১০ টায় প্রেসক্লাব যশোর থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাওয়া হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। এসব কর্মসূচিতে সকলকে অংশ নেওয়ার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।