কাজী এনায়েত উল্লাহ, রাজশাহী অফিস:
রাজশাহীতে চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন মহানগর বিএনপির এক নেতা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় এই মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটির বাদী বজলুল হক (মন্টু) রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় আসামি করা হয়েছে কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরোর প্রধান ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাজী টেলিভিশনের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, দৈনিক করতোয়ার রাজশাহী প্রতিনিধি রোজিনা সুলতানা ও স্থানীয় দৈনিক উপাচার পত্রিকার সাংবাদিক আসগর আলী সাগরকে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, বিগত ২০২২ সালের ৩রা ডিসেম্বর রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি দিয়ে মিডিয়া কার্ড তৈরি করা হয়। রাজশাহীতে কর্মরত অধিকাংশ সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই মিডিয়া কার্ড নেন। আসামিরা সমাবেশের আগে ২রা ডিসেম্বর দুপুরে নগরের মালোপাড়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আসেন। তিনি (বাদী) তাঁদের ওই মিডিয়া কার্ড দিলে তাঁরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে মিডিয়া কার্ড গ্রহণ না করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। তাঁরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অপমান, অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে তাঁদের খুনি ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন মানহানিকর মন্তব্য করেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করে মানহানি করেছেন। এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বোয়ালিয়া মডেল থানার মালোপাড়া বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে বসে ৩রা ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আরটিভির সংবাদে মানহানিকর সংবাদ তিনি দেখেছেন ও শুনেছেন। তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে দেরি হয়েছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই সময়ে বিএনপির সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। সমাবেশে প্রবেশে এ ধরনের একটি কার্ড ব্যবহার করা হবে না, এটা বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) চাপে একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্ড ব্যবহার ছাড়াই তাঁরা সংবাদ সংগ্রহ করেছেন। সমাবেশও বর্জন করা হয়নি। মামলার বাদী ওই সময়ে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও পলাতক ছিলেন। বিএনপির কার্যালয়ে তাঁরা কেউ যাননি। একটি রেস্তোরাঁ থেকে মিডিয়া কার্ড সরবরাহ করা হয়েছিল।
সাংবাদিক রাশেদ রিপন বলেন, গত ২২ আগস্ট মন্টু (বজলুল হক) তাঁর বাড়ির মিস্ত্রিদের কাজ করতে বাধা দেন। তিনি জানিয়েছেন, এই বাড়ির আগের মালিকের ছেলের কাছে তিন লাখ টাকা পাবেন। সেই টাকা তুলে দিতে হবে; নয়তো তাঁরা কাজ করতে দেবেন না। তখন মন্টু হুমকি দিয়েছিলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নিউজ করেছেন, এই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
রাশেদ রিপন আরও বলেন, ওই সময় মিডিয়া কার্ড নিয়ে শুধু সাংবাদিক নন, সবাই আলোচনা করেছিলেন। সাংবাদিকেরা সাধারণত কোনো দলের কার্ড গলায় ঝোলান না। সাংবাদিকদের নিজেদের কার্ডই পরিচয়। এ ধরনের মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য বাধা।
এ ব্যাপারে জানতে বজলুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন, চাঁদাবাজি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারায় একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।