জেলা প্রতিনিধি- ভোলা : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে ভোলার ৭ উপজেলা ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। ধুমরে মুছরে দিয়েছে গাছ-পালা, ঘর বাড়িসহ ক্ষেতের আমন ফসল। ঘর ও গাছ চাপায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুরের মাছ, গবাদী পশুর।
সরজমিনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়ায় গাছচাপায় মফিজুল ইসলাম নামে এক যুবক, দৌলতখানে ঘরচাপায় খাদিজা বেগম ও চরফ্যাশনে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে গাছচাপায় মনির খন্দকার নামে একজন মারা গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখনো বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় ঝড় ও বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রাত আড়াইটায় হঠাৎ করেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে পানি বাড়তে থাকে। জোয়ারের পানির উচ্চতা ছিল ৪ দশমিক ৬, যা গত ১০ বছরের রেকর্ড। বলা যায় ধানক্ষেতও ৭ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।
আগের দিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট বিধ্বস্তর হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো হলেও লঞ্চ ও ফেরি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মোঃসহিদুল ইসলাম।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ভোলা বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক ঘর-বাড়ী এবং বোরহানউদ্দিন কামিলা মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ এবং অতি বৃষ্টি, তীব্র বাতাসে ধান, সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘরের চাপায় পড়ে উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ফুলকাচিয়া গ্রামের মজম বাড়ীর মোখলেছ এর পালিত একটি গরু মারা যায়।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার দিন ব্যাপী ভারী বৃষ্টি বাতাস হয়েছে। সন্ধ্যার পর হতে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যায়। তীব্র বাতাসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গাছপালা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ওই গাছের চাপায় পড়ে কিছু ঘর ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধুমড়ে মুছড়ে পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া অতি বৃষ্টি ও তীব্র বাতাসে পুকুরে মাছ ও ঘেরের মাছ ভেসে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শীতকালীন সবজি’র বেশি ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে প্রায় ১৩শত ঘর-বাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের সম্ভাব্য তালিকা হাতে এসেছে। এগুলো যাচাই বাচাই করে সঠিক তালিকা প্রনণয় করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।
উপজেলার গংগাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ সুজন হাওলাদার জানান, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে আমার ৪টি মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। সরকারি কিছু সহযোগিতা পেলে মাছের ঘেরে আবার মাছ চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতাম। এছাড়াও কুতুবা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জাফর মাতাব্বর মাছের ঘের হতে মাছ পানিতে ভেসে প্রায় চার লক্ষ টাকার ক্ষতিসাধন এবং পৌর ১নং ওয়ার্ডের অদুদ মাষ্টারের ঘের পানিতে তলিয়ে প্রায় এক লক্ষ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। উপজেলার এরকম বহু পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শামীম জানান, যে সকল ধানে ফল অবস্থায় রয়েছে সেই ধানে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পানি এ ভাবে নেমে গেলে ক্ষতি’র পরিমাণ কম হবে। তবে পানিতে ডুবে সবজি ও শীতকালীন সবজি বেশি ক্ষতি হয়েছে। কাচিয়া মফিজের খামারে প্রায় ১২ হাজার কলা গাছ ও ১০ হাজার পেঁপে সহ বিভিন্ন ফল গাছের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকার কাজ করছি। আগামীকালের মধ্যে এসব ক্ষয়ক্ষতির তালিকা উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবো।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চরফ্যাশন উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার ভোর থেকে উপজেলায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে ভারী-বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে, কুকরি মুকরি, ঢালচর, চর পাতিলা ইউনিয়ন।
ইউএনও আল নোমান জানান, মানুষ নিরাপদে ছিলেন তাদের কোন প্রকারঅসুবিধা হয়নি।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মনপুরায় প্রথমবারের মতো বাঁধ উপচে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া নদীবেষ্টিত ১ লাখ ২০ হাজার জনবসতি অধ্যুষিত এই উপজেলায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ অলিউল্লাহ জানান, প্রথমবারের মতো বেড়িবাঁধ উপচে পানি ভেতরে প্রবেশ করছে। জোয়ারে এই উচ্চতা ৭ ফুটেরও বেশি ছিল।
তিনি বলেন, শুধু আমার ইউনিয়নেই ৩-৪শ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। মহিষ ভেসে গেছে ৩-৪শ। আমার ৬০টি মহিষের মধ্যে মাত্র ২০টি খুঁজে পেয়েছি। এ ছাড়া এলাকার হরিণসহ অন্যান্য পশু যে কী পরিমাণে ভেসে গেছে তা আমাদেরও হিসাব নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মনপুরা ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারে পানির উচ্চতা ৭ ফুটেরও বেশি ছিল, যা ৬ ফুট বেড়িবাঁধ টপকে গেছে। এই উপজেলার ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।
তবে পশু ও মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পুরো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় যুবক রাকিব জানান, এর আগে তারা বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে দেখেননি। কিন্তু এবারে জোয়ার এত বেশি ছিল যে, বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে, যা এখনো আছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কাউসার জানান, বনের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও হরিণ ভেসে গেছে কি না এ তথ্য আমরা এখনো জানতে পারিনি।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.