জেলা প্রতিনিধিঃ ভোলায় গ্যাস ভিত্তিক ৩ মাস আগে বন্ধ হওয়া ৩৪.৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট চালু করার দাবী উঠেছে আপামর জনসাধারনের পক্ষ থেকে। তীব্র লোডশেডিং এ ২ লাখ গ্রাহক ও শত শত ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা র্দূভোগে।
যান্ত্রিক ত্রæটির কারনে অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকশত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত ভোলার সিনহা গ্রæপের গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট। এটি বন্ধ থাকায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। জাতীয় গ্রীড থেকে লোড নিয়ে ভোলায় বিদুৎ সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে না পাড়ায় চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানার মালিকসহ প্রায় ২ লাখ গ্রাহক। গত কাল (১৯ আগস্ট) সকালে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাবীতে শহরে মানববন্ধন করেছে ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সিনহা গ্রæপ ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় পুরাতন মেশিন দিয়ে গ্যাস ভিত্তিক ৩৪.৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যায় এ কোম্পানি। শুরু থেকেই যান্ত্রিক ত্রæটি নিয়ে চলে উৎপাদন কার্যক্রম। তবে মাসে ১০/১৫ দিনসহ কখনও কখনও মাসব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘদিন অন্ধকারে থাকতে হয়েছে ভোলাবাসীকে।
সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারী বড় ধরনের মেকানিকাল ত্রæটি ধরা পড়ায় উৎপাদন কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তিন মাস ধরে ৩৪.৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় দেখা দেয় বিদ্যুৎ সংকট। তবে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কর্তৃপক্ষ বলছে, বিদ্যুৎ সচল রাখতে তারা ভোলা সদর থেকে ৪০ কিঃমিঃ দুরে থাকা বোরহানউদ্দিনের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জাতীয় গ্রিড থেকে লোড নিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে না পাড়ায় ফিডার গুলোতে বাই রোটেশনে দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ।
ঘন ঘন লোডশেডিং এ সিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা গুলো। অপরদিকে প্রচন্ড গড়মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ২ লাখ গ্রাহকের জনজীবন।
তাদের চাহিদা মতে ব্যাংক মোটা অংকের লোন দিতে অস্বিকৃতি জানালে, রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের কর্তৃপক্ষ মেশিনের যন্ত্রাংশ সরবরাহ না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে পালিয়ে যায়।
ভোলা এম আলম অটোরাইস মিলের ম্যানেজার মোর্শেদ আলম বলেন, একবার বিদ্যুৎ গেলে ৪/৫ ঘন্টা পরে আসে। এই সময়ে আমদের শ্রমিকদের বসে থাকতে হয়।পার্টিদের সময় অনুযায়ী মালমাল দিতে পারিনা। মা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়র্কশপের লেদ চালক জাহাঙ্গীর বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের কাজ বন্ধ। কাজ যা হয় বিদ্যুৎ না থাকায় কাজ করতে পারিনা। ভোলা বিসিক শিল্পনগরীর খান ফ্লাওয়ার মিলের ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহ ফাহিম জানান, সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মিল চালাতে হয় কিন্ত ভোলায় উদ্ধৃত গ্যাস বিদ্যুৎ থাকার পরও আমরা বিদ্যুৎ ও গ্যাস না পাওয়ায় পন্য উৎপাদন করতে পারছিনা। আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা বসে বসে সময় কাটাতে হয়।
ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইউসুফ সাংবাদিকদের কে বলেন, ৩৪.৫ মেগাওয়াটের রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বোরহানউদ্দিনের ২২৫ মেগাওয়াটের জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিচ্ছি। চাহিদার তুলনায় কম পাওয়ায় রোটেশন করে বিভিন্ন ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হচ্ছে। বৃস্টি সহ বিভিন্ন দূর্যোগে তারের উপর গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার কারনে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখতে হয়। প্রাকৃতিক কারনেই লোডশেডিং হয়। আমরা ইচ্ছা করে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখিনা। ভোলায় একটি সাব-স্টেশন হলে বিদ্যুৎ সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি।
রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ হাফিজুর রহমান জানায়, মেকানিকাল সমস্যা দেখা দেয়ায় ২৫ জানুয়ারী থেকে ৩ মাস উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এক্সপেয়ার যন্ত্রাংশ আনার জন্য বিদেশে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যন্ত্রাংশ আনতে পারলে পূনরায় উৎপাদনে যাবে এ পাওয়ার প্লান্ট। তার বক্ত্যব্যে জানা গেছে, লোন খেলাপী এই কম্পানী সরকারী ব্যাংকের মোটা অংকের লোন না পেলে এই প্লান্ট আর চালু না করার আশংকার রয়েছে।
গ্যাস ভিত্তিক বন্ধ হওয়া ৩৪.৫ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট চালু করার দাবী উঠেছে আপামর জনসাধারনের পক্ষ থেকে। জনতা বর্তমান জালানী উপদেষ্টার দৃষ্টি কামনা করছেন।