প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ১৫, ২০২৫, ৩:২৩ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ১৪, ২০২৫, ৩:৪৪ অপরাহ্ণ

কায়সার হামিদ মানিক,কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফর ঘিরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। রাস্তাঘাটে বসছে নতুন ইট, ইফতারের জন্য টাঙানো হচ্ছে সামিয়ানা। নতুন করে সেজেছে পরিদর্শনের স্থানগুলো। নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানানোর পাশাপাশি দুই শীর্ষ নেতার মুখোমুখি বসে ইফতার করবেন এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিরাজ করছে বেশ উচ্ছ্বাস।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার বর্ধিত ক্যাম্প ২০-এ বসে লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাই পুরো এলাকায় চলছে প্রস্তুতি। এরই মধ্যে জোন ভাগ করে রোহিঙ্গাদের বসার জন্য বিছানো হয়েছে ত্রিপল। তৈরি করা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব পরিদর্শন করবেন ১৮ নম্বর ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সেবা এবং ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র। তাই এসব স্থানের যাতায়াতের রাস্তাগুলো মেরামত করে বসানো হয়েছে নতুন ইট। একই সঙ্গে নতুন করে সেজেছে পরিদর্শনের স্থানগুলো।
জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগমনকে কেন্দ্র করে উচ্ছ্বসিত রোহিঙ্গারা। বিশ্বনেতাকে তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরতে তারা মুখিয়ে আছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে আশায় বুক বেধে আছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। অতীত ব্যর্থতা ভুলে তিনি এবার মিয়ানমারে তাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক মহলকেও চাপ সৃষ্টি করবেন বলে স্বপ্ন দেখছেন টেকনাফ এবং উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়া এসব রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জোহার বলেন, ড. ইউনূস সাহেব আমাদের দেখতে আসবে এটা শুনেই খুশি লাগছে। জাতিসংঘের প্রধান আসবেন সেটাও আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির। এই কারণে আমরা সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেছি। অপেক্ষা করছি কখন তারা আসবেন। তাদের ক্যাম্পে আসাটা আমাদের জন্য খুশির সংবাদ।
একই ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক আব্দুল হামিদ বলেন, আমি প্রথম ড. ইউনূসকে দেখতে পাব। আমার খুব ইচ্ছা আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা, ক্যাম্পে আমাদের সুবিধা অসুবিধার কথা তাকে জানাব। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি তিনি কখন আসবেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রমগুলোর তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশ, এপিবিএন, জেলা প্রশাসন এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। আর জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার আগমনে কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় থাকবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে কার্যক্রমগুলো হবে তা তত্ত্বাবধান করছে সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছে। কয়েক স্তরের বলয় থাকবে। এসএসএফ কক্সবাজার চলে এসেছে, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে, এসব ভেন্যুতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকছে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, উখিয়ার বর্ধিত ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে আছে এবং বাংলাদেশ যে তাদের পাশে রয়েছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এটি ঐতিহাসিক একটি বড় ঘটনা।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সফর হবে ঐতিহাসিক। এই সফরে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে এবং তারা স্বদেশে ফিরবে এমন বার্তা দেবে।
চারদিনের সফরে বৃহস্পতিবার এমিরেটসের একটি ফ্লাইট (ইকে-৫৮৬) বিকেল ৫টায় ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। শুক্রবার সকাল ৯টায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকারবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।পরে সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
বৈঠকের পর গুতেরেস রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম তাকে স্বাগত জানাবেন।