কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোণা)প্রতিনিধি: নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী আপন চন্দ্র দাস(১৩) খুনের ঘটনায় পরকীয়া প্রেমিক যুগলকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে ওই এলাকা থেকে খুনের সাথে জড়িত নাগেরগাতি গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে মো.মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে ফিজু(৪০) ও শিক্ষার্থীর মা সরলা রাণী দাস(৪৮)কে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত শিক্ষার্থী আপন চন্দ্র দাস ওই ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের মৃত ভবেশ চন্দ্র দাসের ছেলে। সে নাগেরগাতী বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। প্রায় ৪ বছর পূর্বে বাবা মারা যান। বড় ভাই প্রণয় চন্দ্র দাস সুসং সরকারী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ওই খুনের ঘটনা গত (৩০আগস্ট) রাতে নিহত আপনের বড় বোন ঝর্না রানী দাস বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে গত বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর)চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুর্গাপুর চৌকিতে হাজির করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মাসুম মিয়া জামিন না মঞ্জুর করে আদালতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তবে আদালতে ৬৪ ধারা জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু খুনের ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্গাপুর থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক শুভাশিষ গাঙ্গুলি।
সরেজমিন ঘুরে অনুসন্ধানে জানা গেছে, আপন চন্দ্র দাস গত (২৬ আগস্ট) শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিল। নিখোঁজের ৫দিন পর মঙ্গলবার বিকেলে ওই ইউনিয়নের পাবিয়াখালী গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আপন চন্দ্র দাসের বাড়ির ৫-৬শ গজ দুরে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে ফিজুর বাড়ি। নিখোঁজের দিন বিকেলে মাছ ধরার কথা বলে আপনকে খবর দেয় ঘাতক মোস্তাফিজুর। পরে ওই দিন রাতে তার স্ত্রী-সন্তানরা বাড়িতে ছিল না। নির্জন বাড়িতে প্রায়ই জোয়ার আসর বসাতো। সে একজন দিনমুজর ছিল। নির্জন বাড়ির দরজা বন্ধ করে আপনকে খুন করে। পরে ওই রাতেই ঘুমের বড়ি ও হাই প্রেসারের ঔষধ খেয়ে মায়ের ঘরে এসে মোস্তাফিজুর রহমান ঘুমান। মঙলবার দিন খুব সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়িতে থেকে বেড়িয়ে যান ঘাতক। ওইদিন বিকেলে লাশের সন্ধান মিলে ধান ক্ষেতে। ঘটনার দিন আপন চন্দ্র শীলের মা সরলা রাণী দাসের ভুমিকা ছিল রহস্যজনক। সন্তানের মৃত্যুতে এক ফোটা পানি ছিল না চোখে,এমনকি শ^শান ঘাটে লাশটি দাহ করার পূর্বে সন্তানের মুখটি দেখতে যাননি পাষÐ মা। সন্তান হত্যার ঘটনাটি পুরোপুরি জানতেন তিনি। ৪ বছর আগে স্বামী মারা যান সরলা রাণী দাসের। স্বামী মারা যাওয়ার পর প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে সরলা রাণী দাসের। এক পর্যায়ে তাঁদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় রাতেই দুজনের মেলামেশা হতো। হঠাৎ একদিন রাতে তাঁদের মেলামেশার দৃশ্য কিশোর আপন চন্দ্র দাস দেখে ফেলে। এই দেখাই কাল হয়ে উঠে। সাক্ষীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতেই আপনকে হত্যা করে মোস্তাফিজুর রহমান ফিজু। সন্তানের লাশ খুঁজতে মায়ের নাটকীয় খুঁজ যেন,সিনেমার অভিনয়কেও হার মানায়। সন্তানের লাশ ঘরে রেখে, ঢাকায় খুঁজতে বের হন সরলা রাণী শীল। তবে আপন নিখোঁজের ঘটনায় দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে বড় ভাই প্রণয় চন্দ্র শীল। স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে আপন হত্যার সাথে জড়িতদের বিচারের দাবী জানিয়ে নাগেরগাতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ১ সেপ্টেম্বর বিশাল মানববন্ধন করেছে। সেখানে মা সরলা রাণী দাস উপস্থিত ছিল না।
উল্লেখ্য যে, নাগেরগাতী গ্রাম থেকে গত শুক্রবার(২৬ আগস্ট) থেকে নিখোঁজ ছিল ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থী আপন চন্দ্র দাস(১৪)। মঙ্গলবার (৩০আগস্ট) বিকেলে ওই ইউনিয়নের পাবিয়াখালী গ্রামের ধান ক্ষেত থেকে নিখোঁজের ৫দিন পর লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনাটি একটি সেনসেটিভ ইস্যু। ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে মাঠে কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানানো হবে।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.