নোয়াখালী প্রতিনিধি :: সেনবাগের সাফিয়া-সোবহান নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে সোনিয়া আক্তার (২২) নামের এক প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় মৃতের স্বজনরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর স্বজনদের প্রায় ১০ঘন্টা জিম্মি করে সাড়ে ৩শত টাকার সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ওই মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। মৃত সোনিয়া আক্তার সেনবাগ উপজেলা ৫নং অজুনতলা ইউপির ইদিলপুর গ্রামের নুরনবীর মেয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা ৬নং বরোগাঁও ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের মোল্লা বাড়ির মোঃ ফারভেজের স্ত্রী।
মৃতের স্বামী মোঃ ফারভেজ অভিযোগ করে জানান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তার উকিল পিতা মাইন উদ্দিন ও তার স্ত্রী সহকারে প্রসুতি সোনিয়া আক্তারকে দ্রæত ছাতারপাইয়া সাফিয়া-সোবহান প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রাত ষাড়ে ১০ দিকে রোগিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানে জন্ম হয়। রাত সাড়ে ১০টারদিকে রোগীর স্বজনদের মুঠোফোনে জানানো হয় রোগীকে রক্ত দিতে হবে। এরপর তারা দুইজন ডোনার থেকে রক্ত সংগহ করে রক্ত দেন। পরবর্তীতে রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতাল থেকে ফের মুঠোফোনে জানানো হয় রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন তাকে কুমিল্লায় নিয়ে জেতে হবে। এরপর হাসাপাতালে এ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হলেও ওই হাসপাতাল রোগীকে গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে । এরপর কয়েকটি হাসপাতাল গুরাগুরি করে ফের ঢাকার উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলে পথে রোগীর মৃত্যু হয়।
এরপর এ্যাম্বুলেন্স যোগে রোগীর মৃতদেহ সাফিয়া সোবাহান হাসপাতালে নিয়ে এসে রোগীর ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বলে আইনের আশ্রয় নিবে বলে হুমকি দিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মরদেহ সহ রোগীর স্বজদের ১০ঘন্টা আটকিয়ে রাখে। শেষে দুপুর ২টার সময় সাদা ষ্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ৩লাখ টাকা দফারফা করে লাশ সহ রোগীর স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন হাসাপাতালে ম্যানাজার মেজবা উদ্দিন, হাসপাতাল তদারকিকারী (অবঃ)সাবেক সোনালী ম্যানাজার আহম্মদ উল্লাহ, ছাতাপাইয়া ১নং ওয়ার্ড মেম্বার নুর আহম্মদ, বারোগ্াঁও ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার কামাল, মৃতের স্বামী মোঃ ফারভেজ,পিতা নুরনরী, উকিল পিতা মাইন উদ্দিন প্রমুখ।
এব্যাপারে যোগাযোগ করলে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকলপনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাঃ রাদিফা জানান, জেলায় নতুন সিভিল সার্জন যোগদান করছেন,তিনি ওই যোগদান অনুষ্ঠানে আছেন।এধরণের ঘটনার অভিযোগ জেলা সিভিল সার্জন অফিসে করতে হয়। ওই অফিস থেকে তাদেরকে তদন্ত করতে বললে তিনি বিষয়টি তদন্ত করবেন।
এব্যাপারে যোগাযোগ করলে সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এসএম মিজানুর রহমান জানান এধরণের অভিযোগ কেউ দেয়নি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এব্যপারে নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুম ইফতেখার জানান, তার অনত্র বদলি হয়েছে। তিনি নতুন সিভিল সার্জনকে দায়ীত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন। পরে নতুন সিভিল সার্জনের অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
এব্যপারে সাফিয়া-সোবহান হাসপাতালের ম্যানাজার মেজবা উদ্দিনের সঙ্গে কথা বললে তিনি রোগী মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলে,বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে বলে জানান।
উল্লেখ্য সেনবাগে প্রায় সময় ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং এক শ্রেণীর প্রভাবশালীর বাধার মুখে স্বজনরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেনা। এতে করে প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকরা ভূয়া ও অনঅভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। অভিজ্ঞ মহলের দাবী অভিলম্ভে সেনবাগ সহ জেলায় ভ্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়েম ওঠা হাসপাতালগুলো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার।