প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১, ২০২৪, ৯:৪২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ৪:১৭ অপরাহ্ণ
কায়সার হামিদ মানিক,স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার। কক্সবাজারের উখিয়ায় টোকেন বানিজ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা নেই কোন পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা,যানযটে নাকাল পথচারী ও যাত্রীরা,সঠিক পদক্ষেপ নেই ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের।
উখিয়া থানার মোড় ও ভূমি অফিসের সামনে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ের দায়ে গত মাস দেড়েক আগে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে অর্ধশতাধিক সিএনজি গাড়ী আটক করে।পরে সিএনজি সমিতির সভাপতি অবৈধ পার্কিং আর হবেনা বলে মুখিক মুসলেকা দিয়ে সিএনজি গাড়ী গুলো নিয়ে যায়। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতে প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে আবারও থানার মোড়ে যত্রতত্র গাড়ী পার্কিং চালাচ্ছে।
মরিচ্যা থেকে পালংখালী পর্যন্ত ২ হাজারের ও বেশি সিএনজি হতে মাসে ৬০ লাখ টাকার ও বেশি টোকেন বাণিজ্যের মাধ্যমে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কথিত সিএনজি সমিতির সিন্ডিকেট ও সড়কে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের আইনী জটিলতা থেকে বাচঁতে উখিয়ায় বিভিন্ন সড়কে প্রতিমাসে ৩০০ টাকার টোকেন-স্টিকার দিয়ে চলছে সহস্রাধিক অবৈধ সিএনজি। পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থার কথা বলেও লাইন খরচের নাম দিয়ে সমিতি কর্তৃক প্রতি গাড়ি থেকে নির্ধারিত একটি ফি ও আদায় করে যাচ্ছে সমিতির লাইনম্যানরা । অধিকাংশ সিনএনজি গাড়ির নম্বরপ্লেট, রুট পারমিট কিংবা কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব গাড়ির চালকরা একটি টোকেন বা স্টিকার দেখিয়ে পুলিশের তল্লাশি থেকে মুক্তি পাই। সুত্রে জানা যায় এই টোকেন গুলো বিক্রি করেন উখিয়া সমিতির কয়েকজন ভাড়াতে লোক, কোটবাজার সমিতির মনজুর, ভুলু, আব্দুর রহমানসহ অনেক টোকেন বিক্রেতারা।
কি আছে এই টোকেনে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে উঠে আসে, উখিয়া উপজেলায় মরিচ্যা থেকে পালংখালী পর্যন্ত ৩টি সিএনজি সমিতির আওতায় প্রায় তিন হাজার (৩০০০) মত তিন চাকার সিএনজি ও অটোগাড়ি রয়েছে। এই সমিতির নিয়ন্ত্রিত গাড়ি এবং ড্রাইভারকে নিরাপদ রাখতে ৩০০ টাকা করে মাসোহারা নিয়ে একটি টোকেন ধরিয়ে সড়কে চলাচলের জন্য অনুমতি দিয়ে থাকেন । এতে সড়কে পুলিশ বা অন্যন্য কোন সমস্যায় পড়লে সমিতি গুলো তাদের সমস্যা সামাধান করেন।
এ অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে সিএনজি সমিতি থেকে প্রতিমাসে নির্ধারিত একটি মাসোহারা দিতে হয় যাতে সমিতির কোন গাড়ি পুলিশে না আটকায়। গাড়ি বৈধ হউক বা অবৈধ হউক সমিতি প্রদত্ত টোকেন থাকলেই গাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি ড্রাইভার বলেন, গাড়ির যাবতীয় কাগজপাতি ঠিক থাকলেও সমিতির মাসিক টোকেন না থাকলে পুলিশে গাড়ি আটকিয়ে বিভিন্ন মামলা দেন না হলে মুচলেকার মাধ্যমে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়। এখানে গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে ৩০০ টাকা দামের টোকেন অনেক দামি তাই আমরা মাসিক টোকেন নিয়ে থাকি।
সুশীল সমাজের মন্তব্য, অবৈধ গাড়ি এবং ড্রাইভার দারা যেমনি সড়কে সমস্য সৃষ্টি হয় তেমনি এই অবৈধ মাসিক টোকেন বানিজ্যের জন্য সরকার অনেক বড় রাজস্ব হারাচ্ছে। প্রতিমাসে এই কথিত সমিতিগুলো লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে যা সরকারের কোষাগারে একটি পয়সা ও জমা হচ্ছে না।
এদিকে উখিয়ার সড়কগুলোতে যেমনি বেড়েছে অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা তেমনি বেড়েছে যানযট। নেই কোন পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা। সড়কে অনিয়ন্ত্রিত ফিটনেসবিহীন ড্রাইভার দারা প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়কে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাইওয়ে পুলিশের নেই কোন ভুমিকা। নেই কোন সচেতনতার প্রচার প্রচারণা। আছে শুধু সড়কে চাদাবাজীর অভিযোগ। গেল সপ্তাহ খানেক আগে শাহপুরী হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জয়নাল আবেদীনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় একটি গাড়ি আটকিয়ে ১০ হাজার টাকা চাদা দাবি করলে গাড়ির মালিক দিতে অপারগ প্রকাশ করায় গাড়ি জব্দ করে নিয়ে যায় পরে তাদের উপর ক্ষুব্দ হয়ে হামলা চালায় ভুক্তভোগী পরিবার ও সাধারণ জনগন। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
উখিয়া সিএনজি সমিতির সভাপতি মামুন চৌধুরী বলেন, সমিতি করা হয়েছে গাড়ি এবং ড্রাইভারদের নিরাপত্তা ও সুবিধা দেওয়ার জন্য এইখানে কোন টাকার কাজ কারবার নেই। তাছাড়া মাসিক টোকেন উখিয়া সমিতি নেয় না অন্যান্য সমিতির ব্যাপারে আমরা অবগত নই।
কোটবাজার সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শরিফ চৌধুরী জানান, সিএনজি সমিতির নাম দিয়ে কিছু অবৈধকালোবাজিরা এসব টোকেন বানিজ্য করেন কিন্তু প্রকৃত সিএনজি মালিক সমিতি টোকেন বানিজ্য করে না। কোটবাজার সিএনজি মালিক সমিতি সড়কে ড্রাইভার এবং গাড়ি নিরাপদ রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে কিন্তু কারও কাছ থেকে একটা পয়সাও নেয় না। তবে মাঝে মধ্যে থানা পুলিশকে সহযোগীতা করার জন্য সমিতি থেকে ফ্রি গাড়ির সেবা দেওয়া হয় তা ও যে ড্রাইভারের আপত্তি আছে তাকে দেওয়া হয় না। স্বইচ্ছায় যার মন চাই সে গিয়ে পুলিশকে রাতের যাত্রী সেবা দিয়ে আসেন।
মরিচ্যা সিএনজি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ জানান, গত ডিসেম্বরে আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কোন গাড়ি থেকে মাসিক টোকেন দিয়ে টাকা নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র ড্রাইভারদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য আমরা সংগঠন করেছি।
এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে উখিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, হাইওয়ে পুলিশ কোন ধরনের মাসিক চাঁদা নেয় না, কোন সমিতি যদি বলে মাসিক চাঁদা দিয়েছে যাকে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সড়কে অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
উখিয়ার ট্রাফিক সার্জন পলাশ বড়ুয়া জানান, যানযট নিরসনের জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি পাশাপাশি অদক্ষ চালক ও অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিএনজি সমিতির কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.