আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর)\লিচুর রাজ্যে এবার যেন শেষ পেরেক বসতে শুরু করেছে। টানা তাপদাহে মাদ্রাজি জাতের লিচু অপরিপক্ব¡ অবস্থায় লাল রং ধারণে জ্বলে শেষ হওয়ার পর এবার লাগাতার ঝড় বৃষ্টিতে বোম্বে জাতের লিচু ফেটে যেতে শুরু করেছে। প্রকৃতির কাছে যেন এবার বিলীন হতে চলেছে মৌসুমী রসালো ফল লিচু। বাগান মালিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মাঝে যেন আশার পথে অন্ধকার। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে বিরলের লিচুচাষীরা ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
বিরল উপজেলার লিচু চাষী আবু বক্কর জানান, তাপদাহে মাদ্রাজী জাতের লিচু অসময়ে লালচে রং ধারণ করে। তাই টক স্বাদ থাকলেও লিচু বিক্রি করতে হয়েছে। করলা গ্রামের লিচু চাষী মাজেদুর জানান, তাপদাহের পর বৃষ্টিতে বাগানের অনেক গাছে বোম্বে জাতের লিচু কাঁচা অবস্থায় ফেটে যাচ্ছে। মাদ্রাজি জাতের লিচুরমত বিক্রির সুযোগ নাই, তাই ফেলে দিতে হচ্ছে। কাজিপাড়া গ্রামের লিচু চাষী আনারুল জানান, মাদ্রাজি লিচুতে এবার মিষ্টি স্বাদ পাওয়াই গেলো না। বোম্বে জাতের লিচুতে ফাটল!
বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, উপজেলায় ২ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। যার প্রতি হেক্টরে উৎপাদন গড় ৬.২১ মে. টন। এর মধ্যে সদ্য জিআই পণ্য তালিকায় স্থান পাওয়া বেদানা জাতের লিচু উপজেলার ৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়া মাদ্রাজি ২০৫ হেক্টর, চায়না-২ প্রায় ১২৫ হেক্টর, চায়না-৩ প্রায় ৩২৩ হেক্টর, কাঠালী প্রায় ১৮ হেক্টর আর বোম্বে প্রায় ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়ে আসছে। এবার বোম্বে লিচু ফেটে যাওয়ায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশংকার ব্যাপারে তিনি জানান, বিগত কয়েক সপ্তাহের চলমান তীব্র তাপদাহ পরবর্তীতে হঠাৎই বৃষ্টির ফলে অনেক বাগানেই লিচু ফেটে যাওয়ারমত বিপর্যয় পরিলক্ষীত হচ্ছে। তবে সাধারণত বোম্বাই, মাদ্রাজী লিচুতে এই ফেটে যাওয়ার প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। লিচু এবং বাগানের মটির আদ্রর্তার তারতম্য অতিরিক্ত তাপ এবং হঠাৎ বৃষ্টি এর ফলেই কিছু বাগানে লিচু ফেটে গিয়েছে। বিরলসহ দিনাজপুরের বাগানী ভাইয়েরা লিচু পরিচর্যায় অত্যন্ত পারদর্শী এটি কোন কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নয়। আমরা এখনও বিশ্বাস করি আমাদের বিরলসহ দিনাজপুরে যে পরিমাণ লিচু ভাল আছে সেটি দেশের ভোক্তাদের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে। উল্লেখ্য, বিরল হতে গত দুবছরের ন্যয় এবারও পবিত্র ঈদ-উল-আযহা এর আগেই লিচু রপ্তানীর জোর চেষ্টা চলছে।