সবুজ হোসেন, নওগাঁ:
নওগাঁয় বেড়েছে মাদকের কারবার। জেলা শহরের ১৫টিরও বেশি চিহ্নিত স্পটে চলছে মাদক দ্রব্য কেনাবেচা। এতে শহরজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকসেবীর সংখ্যা। মাদকের টাকা যোগাতে শহরে অপহরণের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, নওগাঁয় সংঘবদ্ধ পাচারকারী দল তৎপর হয়ে উঠেছে। কিছুদিন থেকে হঠাৎ করে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অপহরণ ও চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাসা-বাড়ির পাশাপাশি চুরি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। সেই সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেল ও গরু চুরির হিড়িক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে পুলিশের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলায় অন্তত ছয় শতাধিক মাদকের স্পট রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ স্পটই বেশি। দুপুরের পর থেকেই ওইসব স্পটে মাদকসেবীদের মোটরসাইকেল মিছিল শুরু হয়। জমজমাট আসর চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। নওগাঁ সদর, মান্দা, মহাদেবপুর, বদলগাছী, আত্রাই, রাণীনগর, পোরশা, নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলার অলিগলিতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল, পেন্টাডল, গাঁজা, দেশি-বিদেশি মদ ও চোলাই মদসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত-অপ্রচলিত মাদক। চাল-ডালের মতো সহজলভ্য হওয়ায় ছোট থেকে শুরু করে যুবকদের মধ্যে বেশির ভাগই মাদক গ্রহণ করছে। অল্প বয়সেই মাদকের বিষাক্ত নীল ছোবলে পথে বসে যাচ্ছে অনেকেই। এমনকি বেশি টাকা খরচ করলে হোম ডেলিভারি হচ্ছে মাদকের। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলায় মাদকের দাপট সবচেয়ে বেশি। এই দুটি উপজেলায় সক্রিয় আছে ৫০টি বড় সিন্ডিকেট। শক্তিশালী হয়ে উঠেছে মাদক সরবরাহকারী চক্রের সদস্যরা। মাঝেমধ্যে বহনকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। এর বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। তবে রাঘববোয়ালরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সচেতন মহল বলছেন, জেলা শহরের কলোনী, তাজের মোর এলাকা, মাছ বাজার, ঔষধ পট্টি এলাকা, চকপ্রাণ , শাহী মসজিদ এলাকা, মৃধা পাড়া, কালীতলা, আরজি নওগাঁ উত্তর পাড়া, আরজি নওগাঁ ডাংগাপাড়া, ফয়েজ উদ্দিন কলেজ সংলগ্ন দুর্গাপুর এলাকা, ঈদুরবটতলী সহ ১৫টির বেশি চিহ্নিত স্পটে চলছে মাদক কেনাবেচা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জমে উঠছে মাদকের কারবার এসব এলাকায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার অভাবে মাদক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে বলে দাবি তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন আমাদের সদর থানার অনেক এসআই আছে যারা এই মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখে, পুলিশের সেল্টারেই অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা এই মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।
জেলা শহরের পাশাপাশি সদর উপজেলাতসহ পুরো জেলায় বাড়ছে মাদকের ছড়াছড়ি। মাদকের স্পষ্টগুলো বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ১০-১২ জন খুচরা মাদক ব্যবসায়ী জানান, পুলিশকে ম্যানেজ না করে মাদক ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছেন তারা। আরমান হোসেন, এনামুল হক, রাকিবুল ইসলামসহ ১৮-২০ জন কলেজ শিক্ষার্থী জানান, নওগাঁ জেলা এখন হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য। মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম, যা ভবিষ্যতের জন্য চরম উদ্বেগজনক। অবৈধ মাদক কারবার দ্রুত বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি তাদের।
মুঠোফোনে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে নওগাঁয় মোট চারটি বাহিনী কাজ করে। তাদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক চলছে। মাদক উদ্ধারসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন,মাদকবিক্রেতা সদস্যদের তালিকা করে নিয়মিত গ্রেফতার করা হচ্ছে যেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও কাজ করছে। কিছুদিন আগে ৩০জন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মাদক বন্ধে কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক সভাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।