প্রিন্ট এর তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২৫, ৫:০৩ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ৪:০৭ অপরাহ্ণ
সিরাজগঞ্জে সাংবাদিক শিমুল হত্যার আট বছরেও বিচারকার্য শুরু না হওয়ায় পরিবারে হতাশা
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ; দেশব্যাপী বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল হত্যার আট বছর পূর্ণ হলেও এখনও মামলার বিচারকার্য শুরু না হওয়ায় শিমুলের পরিবারসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার, ছেলে আল নোমান নাজ্জাশি সাদিক, মেয়ে তামান্না-ই-ফাতিমা, মামা হাজী আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, শিমুল হত্যার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও হত্যাকারীদের বিচারকার্য শুরু না হওয়ায় মনে আর প্রবোধ দিতে পারছি না। হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামীই জামিনে বাইরে থাকায় আমরা সবসময় ভয়ে থাকি। আমরা দ্রুত খুনীদের বিচার ও শাস্তি দেখতে চাই। শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মো. আল আমিন হোসেন ও সাবেক সভাপতি বিমল কুমার কুন্ডু বলেন, প্রকাশ্যে গুলি করে শিমুলকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ আসামিপক্ষের নানা কূটকৌশলের কারণে গত আট বছরেও বিচারকাজ শুরু হয়নি এটা অত্যন্ত দুঃখ ও হতাশাজনক
উল্লেখ্য,২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শাহজাদপুর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হয়ে পরদিন তিনি হাসপাতালে মারা যান। ওই হত্যাকান্ডে শিমুলের স্ত্রী নুরুননাহার বাদী হয়ে শাহজাদপুরের সাবেক পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।পরে পুলিশ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি! ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি শাহজাদপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত থেকে মামলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও পরবর্তীতে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। আসামিপক্ষ নানা অজুহাতে সময় প্রার্থনা করে চার্জগঠনে বাধা সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ শিমুল হত্যা মামলা চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এর পর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে রিট করে এটি স্থগিত করে। এর প্রেক্ষিতে নিহত শিমুলের স্ত্রী নূরুননাহার সুপ্রীমকোর্টের আপিলেড ডিভিশনে লিভ টু আপীল করলে আপিলেড ডিভিশনের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ৬ সপ্তাহের মধ্যে রূল নিস্পত্তির নির্দেশ দেন। সেই থেকে ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচারকার্য শুরু হয়নি। ফলে শিমুল হত্যা মামলা আজও পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছ। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক উল্লেখ করে এ ঘটনার অবসানে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ
হত্যা মামলার বিচারকার্য শেষ করতে ও খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী সন্তানসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। এদিকে সাংবাদিক শিমুল হত্যার
৮ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নানা কর্মসূচী পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এ উপলক্ষে ৩ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে ঐতিহ্যবাহী শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের আয়োজনে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, প্রতিবাদ সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকালে শিমুল হত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে ও খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ জাফর লিটনের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র সহ-সভাপতি রাসেল সরকারের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মো. আল আমিন হোসেন, সাবেক সভাপতি বিমল কুন্ডু, সাংবাদিক আবুল কাশেম, জহুরুল ইসলাম, জাকারিয়া মাহমুদ, মির্জা হুমায়ুন প্রমুখ। পরে প্রেসক্লাব কার্যালয়ে প্রয়াত সাংবাদিক শিমুলের রূহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মসূচীতে শাহজাদপুরে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সকল গণমাধ্যমকর্মী ও প্রয়াত শিমুলের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
Copyright © 2025 সংবাদ প্রতিক্ষণ. All rights reserved.