এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা : সার ও জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা নেত্রকোনার কৃষকরা। কৃষি নির্ভর এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমন ধান চাষাবাদ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫ শত ৮০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শত ৯৬ মেট্রিক টন।
চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির অযুহাতে সরকার ১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বৃদ্ধি করেছে। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে। হঠাৎ করে ইউরিয়া সার ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মওসুমে চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে নেত্রকোনার কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাউসী ইউনিয়নের শেখেরপাড়া গ্রামের কৃষক আল আমিন সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কৃষকের দুরাবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, সময়ের সাথে সাথে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। চাষাবাদ এখন অনেকটাই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা এবং হ্যান্ডট্রলি দিয়ে তা বাড়িতে আনা হচ্ছে। সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে জমি চাষাবাদ, ধানের চারা রোপন, ধান কর্তন এবং তা ঘরে তোলা পর্যন্ত সর্বত্র বাড়তি দামের প্রভাব পড়বে।
কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদ হয়ে গেছে অনেকটা সেচ নির্ভর। স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং ট্রাক্টর দিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আকিকুর রেজা খোকন বলেন, আগে এক কাটা জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে যেখানে লাগতো ২ শত টাকা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই জমি চাষ করতে লাগছে সাড়ে ৩ শত টাকা।
সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বামনমোহা গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমন ধান চাষাবাদের খরচ বহুগুন বেড়ে গেছে। মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন এনে ধান চাষাবাদ করলে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন খরচ উঠে আসবে কি না? তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, হঠাৎ করে সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের বাড়তি খরচের ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের দিন মজুরি বৃদ্ধিও তাদেরকে ভোগাচ্ছে। এখন সার ও তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
কৃষকদের মতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারাও। নেত্রকোনা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী উদ্যোগের কারণে একদিকে কৃষিখাতে যান্ত্রীকরণ হচ্ছে, অপরদিকে কৃষকরা এর নানা সুফল ভোগ করছে। তারপরও সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জেলার কৃষি খাতে এর নেতিবাচক কিছুটা প্রভাব পড়বেই।
প্রধান উপদেষ্টা : ড. সরকার মো.আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ও প্রকাশক : একরামুল হক বেলাল
ঢাকা অফিস- ২২, মা ভিলা ,পূর্ব তেজতুরী বাজার, ফার্মগেট-১২১৫। ইমেইল-spnews17@gmail.com, রেলওয়ে পার্ক,পার্বতীপুর,দিনাজপুর। ০১৭১২৩৭০৮০০
© 2023 Spnewsbd. All rights reserved.