ফারুক হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ উত্তরের জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন হচ্ছে সুস্বাদু খেজুর গুড়। এক সময় বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষসহ প্রাণিকুলের রক্ষার জন্য তাল গাছের পাশাপাশি লাগানো খেজুর গাছ এখন শীত মৌসুমে মানুষের কর্মসংস্থান সহ অর্থনৈতিক যোগান দিচ্ছে। প্রতিদিন গাছিরা খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস দিয়ে তৈরী করছে সুস্বাদু উন্নত মানের গুড়। খেজুর গাছের রস থেকে তৈরী গুড়ের স্বাদ এবং মিষ্টতা দেশের খেজুর গুড় উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ জেলা গুলোর মতই। উন্নত মানের ভেজালমুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এ খেজুর গুড়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। প্রতিদিন গাছিদের কাছ থেকে এই নির্ভেজাল খেজুর গুড় নিতে ভিড় করেন স্থানীয় ক্রেতারা।
স্থানীয়রা জানান গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামরদহ ইউনিয়নে ফাঁসিতলা-দাড়িদহ সড়কের রসুলপরে কয়েক শ খেজুর গাছ লাগানো হয়। গাছ গুলি বর্ষাকালে বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষসহ প্রাণিকুল রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে। শীতকালে এ গাছ গুলো থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশে আবদান রাখার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বড় যোগান দিচ্ছে। বর্তমানে এখান ৩শ খেজুরের গাছ থেকে রস বাণিজ্যিক ভাবে খেজুরগুড় উৎপাদন করে এলাকায় সারা ফেলেছেন এলাকার আব্দুল মান্নান নামের এক গুড় উৎপাদনকারী। খেজুর গুড় উৎপাদনের শীর্ষ জেলা গুলো যশোর,ফরিদপুর,রাজশাহী ও নাটোর হলেও এখন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জেও খেজুরের রস থেকে বানিজ্যিক ভাবে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। সংগ্রহ করে প্রতিদিন এসব খেজুর গুড় তৈরী করছেন আব্দুল মান্নান। তিনি জানান মৌখিক চুক্তিতে লীজ নেয়া এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় প্রস্তুত করতে তিনি রাজশাহীর বাঘা থেকে পেশাদার গাছিদের।
খেজুর গুড় উৎপাদক আব্দুল মান্নান বলেন, খেজুরের গাছ গুলোকে দু’ভাগে ভাগ করে একটি অংশ থেকে গাছিদের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪শ’থেকে ৫শ’ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়। ভোর থেকে শুরু হওয়া সংগৃহীত রস জ¦ালকরে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। গুণগতমান ঠিক রাখতে রাজশাহী আনা পেশাদার খেজুর গুড় প্রস্তুত কারক যা স্থানীয় ভাষায় গাছি বা শ্রমিক। গাছিরা জানান এখানকার খেজুরের রসের মান খুব ভলো হওয়ায় এ থেকে ভালো মানের গুড় তৈরী হচ্ছে। উৎপাদিত গুড়ের স্বাদ ও মিষ্টতা দেশের গুড় উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ জেলা গুলোর চেয়েও ভালো বলে দাবি তাদের।
স্থানীয় এলাকাবাসী রহমান বলেন কোন প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ ছাড়াই ভেজাল মুক্ত ভাবে উৎপাদিত এ খেজুরে গুড় স্থানীয়দের মাঝে বেশ চাহিদা রয়েছে। আমরা বসে থেকে গুড় তৈরী করা দেখি। এর আগে কখন খেজুর তৈরী করা দেখিনি। ভালই লাগে যখন রস জ¦াল করার এর এক ধরণের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পরে। উৎপাতি খেজুরের গুড় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পদকপ্রাপ্ত পরিবেশ ও প্রকৃতি প্রেমী আহম্মাদউল্লা বলেন, তাল-খেজুরা গাছ শুধু পরিবেশ রক্ষার কাজ করছে না এখনএই এই এলাকায় খেজুরের গাছ মানুষের কর্মসংস্থান সহ অর্থনৈতিক যোগানেও অবদান রাখছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, এ উপজেলায় যাতে সঠিক নিয়ম মেনে খেজুরের রস সংগ্রহ করে স্বাস্থ্যসম্মত উপয়ে গুড় উৎপাদন করা হয় এ জন্য গুড় প্রস্তুত কারকদের সচেতনতায় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খেজুর গুড় উৎপাদনে আর্থিক লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তারা নিজেদের সবলম্বী হচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়ার আশ^াস প্রদান করেন।
পরিবেশে প্রতিবেশ রক্ষার পাশাপাশি খেজুরের রস থেকে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত খেজুরের গুড় কিছুটা হলেও এ এলাকার গুড়ের চাহিদা মিটাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।